মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান আক্রমণের সিদ্ধান্তের পর, দেশটির সংবিধান ও যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়া জরুরি, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু স্বাধীনতা ভোগ করেন। সংবিধানের ২য় অনুচ্ছেদে প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। তবে, এই ক্ষমতা কতটুকু বিস্তৃত, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
১৯৭৩ সালের ‘যুদ্ধ ক্ষমতা প্রস্তাব’ (War Powers Resolution) পাস হওয়ার পর থেকে, সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, কোনো প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ শুরু করার আগে কংগ্রেসকে অবহিত করতে বাধ্য।
আইনজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ‘যুদ্ধ ক্ষমতা প্রস্তাব’-এর লঙ্ঘন হতে পারে। কারণ, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইলিয়া সোমিনের মতে, এটি একটি গুরুতর পদক্ষেপ, যা কংগ্রেসের অনুমোদন দাবি করে।
তবে, সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করেন, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ সংবিধানের অধীনে বৈধ। তাদের যুক্তি হলো, প্রেসিডেন্ট দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহারের অধিকারী। তারা অতীতে বিভিন্ন প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপের উদাহরণও তুলে ধরেন, যেখানে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। যেমন, জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশের পানামা অভিযান অথবা বারাক ওবামার লিবিয়া আক্রমণ।
অন্যদিকে, সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে এবং কংগ্রেসের ভূমিকা দুর্বল করে। তাদের মতে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো জরুরি অবস্থা ছিল না, যা যুদ্ধ ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয়। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (American Civil Liberties Union) এক আইনজীবী ক্রিস আন্ডার্সের মতে, প্রেসিডেন্ট চাইলে যখন তখন সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারেন, এমনটা হওয়া উচিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, যদি এই সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে সম্ভবত কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। তবে, তারা মনে করেন, কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।
এই বিতর্কের মধ্যে, কংগ্রেসের সদস্যরা তাদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের আইনপ্রণেতারা চান, সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত আরও জোরালো হোক। তারা এক্ষেত্রে যুদ্ধের ঘোষণার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য একটি প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছেন। উদাহরণস্বরূপ, রিপাবলিকান প্রতিনিধি থমাস ম্যাসি এবং ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রো খান্না একটি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে জনগণের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আরও সচেতনতা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে, সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা সম্ভব হবে, যা দেশের জন্য উপকারী।
তথ্য সূত্র: সিএনএন