বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (EIU)। এবারের তালিকায় শীর্ষস্থানটি দখল করেছে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন। এই নিয়ে টানা তিন বছর ধরে শীর্ষ স্থানে থাকা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা এবার দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে।
এই তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান একেবারে নিচের দিকে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের।
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন শহরের জীবনযাত্রার মান বিচার করে এই তালিকা তৈরি করে EIU। স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো এবং পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয় এই র্যাঙ্কিংয়ের জন্য। কোপেনহেগেন স্থিতিশীলতা, শিক্ষা এবং অবকাঠামোতে “নিখুঁত” স্কোর অর্জন করে শীর্ষস্থানটি নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে, সুইজারল্যান্ডের জুরিখের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েনা।
তালিকার প্রথম কয়েকটি শহরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন চতুর্থ এবং সুইজারল্যান্ডের জেনেভা পঞ্চম স্থানে রয়েছে। শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, জাপানের ওসাকা, নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড এবং কানাডার ভ্যাঙ্কুভার।
কিন্তু কেন ভিয়েনা শীর্ষস্থান হারালো? মূলত স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে স্কোর কমে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে। গত বছর একটি কনসার্টে বোমা হামলার হুমকির কারণে সেখানে অস্থিরতা দেখা দেয়, যা শহরের র্যাঙ্কিংয়ের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
অন্যদিকে, কানাডার ক্যালগারিরও র্যাঙ্কিং কমেছে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্বলতার কারণে তারা শীর্ষ দশ থেকে ছিটকে ১৮ নম্বরে নেমে এসেছে। দেশটির অন্যান্য শহর, যেমন- টরন্টোরও অবনতি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে এমনটা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ম্যানচেস্টার এবং এডিনবার্গের মতো শহরগুলিও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কম স্কোর পাওয়ার কারণে পিছিয়েছে। গত বছর অভিবাসন বিরোধী প্রচারণা এবং একটি ছুরিকাঘাতের ঘটনার জেরে সেখানে অস্থিরতা দেখা দেয়।
তবে, সবচেয়ে খারাপ খবর হলো ঢাকার অবস্থান। তালিকায় ঢাকার অবস্থান একেবারে নিচের দিকে, যা আমাদের দেশের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর কারণ হিসেবে এখানকার দুর্বল অবকাঠামো, যানজট, দূষণ, এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার অপ্রতুলতাকে দায়ী করা হয়।
এই তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে সিরিয়ার দামাস্কাস। এরপরের স্থানগুলোতে রয়েছে লিবিয়ার ত্রিপোলি এবং বাংলাদেশের ঢাকা। পাকিস্তানের করাচি ও আলজেরিয়ার আলজিয়ার্সও রয়েছে তালিকার একেবারে নিচে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে জীবনযাত্রার মান খুব বেশি বাড়েনি। স্থিতিশীলতার অভাব এর প্রধান কারণ। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু শহরে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নতি হলেও, সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীলতার অবনতি হয়েছে।
এই তালিকা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। উন্নত জীবনযাত্রার জন্য শহরগুলোর অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। ঢাকা সহ বাংলাদেশের অন্যান্য শহরগুলোতেও এই বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: CNN