যুক্তরাষ্ট্রের কলেজীয় ক্রীড়া জগতে খেলোয়াড় কেনাবেচা নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
এবার ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন (University of Wisconsin) তাদের এক ফুটবল খেলোয়াড়কে দল পরিবর্তন করতে প্ররোচিত করার অভিযোগে ইউনিভার্সিটি অফ মায়ামির (University of Miami) বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
শুক্রবার উইসকনসিন এবং তাদের ‘নেইম, ইমেজ, অ্যান্ড লাইকনেস’ (NIL) সংস্থা ‘ভিসি কানেক্ট’ (VC Connect) যৌথভাবে এই মামলা দায়ের করে।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, উইসকনসিনের হয়ে খেলা এক ফুটবল খেলোয়াড়, যিনি ‘ছাত্র-ক্রীড়াবিদ এ’ (Student-Athlete A) নামে পরিচিত, তাকে বিশাল অঙ্কের ‘এনআইএল’ চুক্তি ত্যাগ করতে প্ররোচিত করা হয়েছে।
এরপর তিনি ফ্লোরিডার একটি স্কুলে খেলার সিদ্ধান্ত নেন।
এই ঘটনার ফলে উইসকনসিন আর্থিক ও সুনামগত ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
খেলোয়াড়ের দলবদলের বিষয়টি ঘিরে সাধারণত এমন গুরুতর অভিযোগ শোনা যায় না।
মামলার নথি অনুযায়ী, এই ঘটনার সাথে জড়িত খেলোয়াড়টি হলেন কর্নারব্যাক জ্যাভিয়ার লুকাস (Xavier Lucas)।
গত ডিসেম্বরে তিনি দলবদলের ঘোষণা দেন।
এরপর লুকাসের আইনজীবী ড্যারেন হেইটনার (Darren Heitner) জানান, উইসকনসিন লুকাসের নাম ট্রান্সফার পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি ছিল না, যা অন্যান্য স্কুলের সাথে তার আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করছিল।
অবশেষে, জানুয়ারিতে হেইটনার ঘোষণা করেন যে লুকাস মায়ামিতে যোগ দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ পর্যায়ে ক্রীড়ার দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির কারণেই এমনটা ঘটছে।
খেলোয়াড়রা এখন আদালত থেকে পাওয়া রায়ের মাধ্যমে দল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করেছেন।
এছাড়াও, ২০২১ সালের একটি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খেলোয়াড়রা তাদের ‘নেইম, ইমেজ, অ্যান্ড লাইকনেস’ (NIL) ব্যবহারের মাধ্যমে চুক্তি করতে পারেন, যা বর্তমানে কোটি ডলারের বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে।
এই পরিবর্তনের ফলে খেলোয়াড় বাছাইয়ের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে, যা চুক্তি এবং দলবদলের বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, উইসকনসিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মায়ামি লুকাসের সাথে এমনভাবে যোগাযোগ করেছিল যা নিয়ম বহির্ভূত।
উইসকনসিন ও ‘ভিসি কানেক্ট’ জানায়, লুকাস ‘এনআইএল’ চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে মায়ামিতে খেলার জন্য প্ররোচিত করা হয়।
এর ফলে তারা বড় ধরনের আর্থিক এবং সুনাম-সংক্রান্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
মামলায় তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ এবং ‘ছাত্র-ক্রীড়াবিদ এ’-এর প্রতি মায়ামির ‘অনৈতিক আচরণের’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
তবে, মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
লুকাসের আইনজীবী হেইটনার মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে তিনি জানিয়েছেন যে লুকাস এখনো মায়ামিতে খেলার পরিকল্পনা করছেন।
উইসকনসিন জানিয়েছে, তারা এই মামলার জন্য তাদের নেতৃত্ব এবং ‘বিগ টেন কনফারেন্স’-এর সমর্থন পেয়েছে।
তারা ক্রীড়া জগতে ‘স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার’ প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
উইসকনসিনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, তারা খেলোয়াড়, তাদের প্রোগ্রাম এবং কলেজিয়েট ক্রীড়া সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ চালিয়ে যাবে।
জানা গেছে, লুকাস ফ্লোরিডার পম্পানো বিচ এলাকার বাসিন্দা।
গত মৌসুমে উইসকনসিনের হয়ে খেলার সময় তিনি ১২টি ট্যাকল, একটি ইন্টারসেপশন এবং একটি সেক করেন।
অন্যদিকে, হেইটনারের দাবি, লুকাস উইসকনসিন থেকে কোনো টাকা পাননি এবং স্কুলের কাছে তার কোনো দেনা নেই।
তিনি আরও যুক্তি দেন যে, উইসকনসিন খেলোয়াড়ের অনুরোধের দুই কার্যদিবসের মধ্যে ট্রান্সফার ডেটাবেসে তার নাম অন্তর্ভুক্ত না করে ‘এনসিএএ’র (NCAA) একটি নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
প্রসঙ্গত, খেলোয়াড়দের দলবদলের বিষয়টি বর্তমানে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি, টেনেসির দুই ভাই, নিকো এবং ম্যাডেন ইয়ামালেভা, তাদের দল পরিবর্তন করে ইউসিএলএ-তে যোগ দেন।
নিকো ইয়ামালেভা ২.৪ মিলিয়ন ডলারের একটি ‘এনআইএল’ চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন।
এছাড়া, আরকানসাসের তরুণ খেলোয়াড় ম্যাডেন ইয়ামালেভা বসন্তকালীন অনুশীলন শেষ হওয়ার পর দলবদলের সিদ্ধান্ত নেন।
এই ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে খেলোয়াড় এবং তাদের চুক্তির বিষয়টি আরও একবার সামনে এসেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন