মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্রের দৌড়: ইসরায়েলের রহস্য ও আন্তর্জাতিক দ্বিমুখী নীতি।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ে এক ধরনের নীরবতা পালন করে আসছে। তারা কখনোই সরাসরি স্বীকার করে না যে তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে, আবার তারা তা অস্বীকারও করে না।
এই নীতি দেশটির কৌশলগত অবস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একই সঙ্গে, তারা প্রতিবেশী দেশ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এবং তা ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর।
১৯৫০ এর দশকে ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়নের নেতৃত্বে নেগেভ মরুভূমিতে ডিমোনা পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। অনেকের মতে, প্রতিকূল প্রতিবেশীদের মাঝে নিজেদের সুরক্ষার জন্য এটি ছিল জরুরি পদক্ষেপ।
যদিও, এই কেন্দ্রের কার্যক্রম দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয়েছিল। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল যে এটি একটি বস্ত্রকল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৭০ এর দশকের শুরু থেকে ইসরায়েলের পরমাণু বোমা বহনে সক্ষমতা ছিল। বর্তমানে তাদের হাতে ৮০ থেকে ২০০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এছাড়াও, তাদের কাছে ১,১১০ কিলোগ্রাম (২,৪২৫ পাউন্ড) প্লুটোনিয়াম মজুদ আছে, যা প্রায় ২৭৭টি বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট। তাদের নৌবহরে এমন ৬টি সাবমেরিন রয়েছে যেগুলি পারমাণবিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে।
জার্মানি থেকে সাবমেরিনগুলো সরবরাহ করা হয়েছে এবং এগুলো হাইফা শহরে অবস্থিত।
তবে, ইসরায়েলের এই গোপনীয়তা মাঝে মাঝে প্রশ্নের জন্ম দেয়। ১৯৮৬ সালে ডিমোনার একজন প্রাক্তন টেকনিশিয়ান মোর্দechাই ভানুনি এই কেন্দ্রের ভেতরের ছবি ও তথ্য ফাঁস করে দেন।
এর ফলস্বরূপ, তাকে দীর্ঘ ১৮ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। বর্তমানে তিনি বিদেশিদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না এবং দেশ ত্যাগ করতেও পারেন না।
মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার একটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রায়ই অস্থির থাকে এবং জোটগুলো দ্রুত পরিবর্তন হয়।
এই অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঘটলে তা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, যদি কোনো চরম পরিস্থিতিতে ইসরায়েল নিজেদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি অনুভব করে, তবে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
আন্তর্জাতিক মহলে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো ইরান ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিলেও, ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাদের নীরবতা অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা ইসরায়েলের কার্যক্রমের প্রতি পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতির একটি উদাহরণ।
যুক্তরাষ্ট্রও সম্প্রতি ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সমন্বিত এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে, কোনো দেশের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করে, সকল দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিয়মের অধীনে আনা উচিত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস