ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অন্তত ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সোমবার ভোরে রাজধানী কিয়েভে চালানো হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন।
শহরটির একটি আংশিকভাবে ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের নিচে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে জরুরি কর্মীরা ছুটে যান। খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া রাতভর ৩৫০টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ৫টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তাদের দাবি, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৩৩৯টি ড্রোন ও ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
গত মঙ্গলবার কিয়েভে চালানো এক সম্মিলিত হামলায় ২৮ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৩ জন একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার কারণে নিহত হন। এর কয়েক দিন পরেই সোমবারের এই হামলা চালানো হলো।
যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের গভীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। তবে তাদের অগ্রগতি সীমিত।
সংস্থাটি আরও জানায়, রুশ বাহিনী মূলত দুর্বল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পদাতিক সৈন্যদের ওপর নির্ভর করে আক্রমণ চালাচ্ছে, যার কারণে ইউক্রেনের ড্রোন-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তারা তেমন সুবিধা করতে পারছে না।
অন্যদিকে, জনসাধারণের মনোবল দুর্বল করতে বেসামরিক এলাকাগুলোতেও দূরপাল্লার হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, কিয়েভ হামলায় উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানকে “ঘাতকদের জোট” হিসেবে অভিহিত করে তাদের মধ্যেকার জোট অব্যাহত থাকলে “সন্ত্রাস” আরও ছড়িয়ে পড়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
সোমবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে জেলেনস্কির। এর আগে তিনি লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নল বারোট বলেছেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলো বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মাধ্যমে রাশিয়ার “সীমাহীন নিষ্ঠুরতা” প্রমাণ করে। তিনি মস্কোর ওপর আরও ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিয়েভের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল ও ক্রীড়া অবকাঠামোতেও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, কিয়েভের শেভচেঙ্কোভস্কি জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, যেখানে একটি পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের অংশ ধসে পড়েছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎস্কো জানিয়েছেন, ওই জেলায় ছয়জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও, একটি ক্ষতিগ্রস্ত উঁচু ভবনে আটকে পড়া এক গর্ভবতী নারীসহ ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ধ্বংসস্তূপের সামনে ধ্বংস হওয়া ভবনের উঠানে বহু গাড়ি, কিছু আগুনে পোড়া এবং ধ্বংসাবশেষের কারণে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অবস্থায় পড়ে ছিল।
আহতদের মধ্যে অনেকে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া আরও মানুষের সন্ধানে উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন।
আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী ওলেক্সি পোজিশানিয়াক জানান, তিনি তার অ্যাপার্টমেন্টের ভেতর থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজ শুনে “আতঙ্কে জমে গিয়েছিলেন”। এরপর তিনি বিস্ফোরণের প্রভাব অনুভব করেন।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান টিমুর ткаচেনকো জানান, রাশিয়ার হামলায় কিয়েভের স্ভিয়াতোশিন মেট্রো স্টেশনের প্রবেশদ্বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এতে দুজন সামান্য আহত হয়েছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে ৩০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রোববার রাতে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় দুজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। চেরনিহিভ অঞ্চলের প্রধান ভিয়াচেস্লাভ চাউস জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে তিনজন শিশুও রয়েছে।
রাজধানী থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বেলা তসার্কভা শহরেও একজন নিহত ও আটজন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সোমবার রাতের হামলায় ২৩টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা