শিরোনাম: ইরান ইস্যুতে আমেরিকার সামরিক পদক্ষেপ: উদ্বেগে কাঁপছে না ওয়াল স্ট্রিট, বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?
গত কয়েক দিনে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা যায়।
তেলের দাম বাড়ে, কমে শেয়ারের দাম। কিন্তু এবার যেন চিত্রটা একটু ভিন্ন। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা যেন অনেকটা ‘অ্যাকশন’-এর অপেক্ষায় রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত এমন ঘটনা ঘটলে তেলের দাম বেড়ে যায় এবং শেয়ারের বাজারে দরপতন হয়। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে চান না।
ইরানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, এমন আশঙ্কাও কাজ করে। এর ফলে বিশ্বের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কিন্তু এবার যেন তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। সোমবার দিনের শুরুতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার কার্যত স্থিতিশীল রয়েছে। খবর অনুযায়ী, ডাউ ফিউচার্স ছিল অপরিবর্তিত।
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার্স সামান্য ০.১ শতাংশ বেড়েছে, নাসডাক ফিউচার্সও ০.১ শতাংশের বেশি ছিল।
অন্যদিকে, তেলের বাজারেও অস্থিরতা ছিল কম। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম সামান্য বেড়েছে, যা শুরুতে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।
তবে পরে তা কমে আসে। আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৭৩ ডলারের সামান্য বেশি।
সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছোটেন, কিন্তু সোনা বা ট্রেজারি বন্ডের দামেও তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।
তাহলে, এমনটা কেন হচ্ছে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এর প্রধান কারণ হলো অনিশ্চয়তা। বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নন, কী ঘটতে যাচ্ছে।
তাদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। একদিকে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলা সীমিত হয় এবং ইরানের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিশোধ না আসে, তাহলে বাজারের অস্থিরতা কমে আসতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকিও হয়তো কমবে। কিন্তু পরিস্থিতি যদি খারাপের দিকে যায়, বিশেষ করে ইরান যদি পশ্চিমা বিশ্বে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে নতুন করে মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে এবং মন্দা আরও গভীর হতে পারে।
এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা আয়াতুল্লাহ খামেনীর বক্তব্য বা প্রতিশোধের অন্য কোনো ইঙ্গিত পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের ফলে ডলারের দাম বেড়েছে। কারণ, সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে ডলারকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে, অনেকেই মনে করছেন, এর পেছনে তেলের দাম বৃদ্ধিও একটি কারণ হতে পারে, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের ব্যবসা ডলারে হয়ে থাকে।
কনভারের প্রধান মুদ্রা এবং ম্যাক্রো কৌশলবিদ জর্জেস ভেসের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা ডলারকে সমর্থন করছে। ইরানের পক্ষ থেকে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার হুমকির কারণেও এমনটা হতে পারে।
কারণ, হরমুজ প্রণালী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহ রুট, যা বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন বাণিজ্য যুদ্ধ বাড়ছে, তেমনি বিশ্বজুড়ে উচ্চ হারে শুল্কের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা আরও বাড়তে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভ যদি সুদের হার কমাতে না পারে, তাহলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তবে, ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি হয়তো শিগগিরই শান্ত হয়ে আসবে। খুব শীঘ্রই হয়তো নতুন বাণিজ্য চুক্তিও হতে পারে।
এমনকি ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতেও পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো তেলের দাম বৃদ্ধি। কারণ, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং জ্বালানির জন্য আমদানি নির্ভর।
তেলের দাম বাড়লে দেশের অর্থনীতিতে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে। একইসঙ্গে, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন