কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) প্রযুক্তি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা যেমন এর সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছেন, তেমনি এর বিপদ সম্পর্কেও সতর্ক করছেন।
সম্প্রতি, সিলিকন ভ্যালির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, মানুষের চাকরি ক্ষেত্রে AI-এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। তাদের মতে, খুব দ্রুতই AI মানুষের কাজের জায়গা দখল করতে শুরু করবে।
এদের মধ্যে, ‘অ্যানথ্রপিক’ নামক একটি AI কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডারিও অ্যামোডি, আগামী এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে AI-এর কারণে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর সম্ভাবনা দেখেছেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসিও তার কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে AI প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তাদের সংস্থায়ও কর্মী ছাঁটাই হতে পারে।
এই ধরনের উদ্বেগের কারণ হলো, AI প্রযুক্তি দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। এটি মানুষের মতো কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে। ফলে, বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং খরচ কমাতে AI-এর দিকে ঝুঁকছে। এমন পরিস্থিতিতে, কর্মীদের মধ্যে তাদের চাকরি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তবে, AI-এর প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, AI চাকরি বাজারের জন্য একটি বড় হুমকি, আবার কারও মতে, এটি মানুষের কাজকে আরও সহজ করে তুলবে এবং নতুন সুযোগ তৈরি করবে। তারা বলছেন, AI হয়তো কিছু কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করবে, কিন্তু এর ফলে নতুন ধরনের কাজেরও সৃষ্টি হবে, যেখানে মানুষের দক্ষতা প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা এই বিষয়টা বিবেচনা করি, তাহলে দেখব আমাদের দেশেও AI-এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, তথ্য প্রযুক্তি, এবং কৃষি খাতে এর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, পোশাক কারখানায় ডিজাইন তৈরি, পণ্য নিরীক্ষণ, এবং বিপণনের মতো কাজগুলোতে AI ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। একইভাবে, তথ্য প্রযুক্তি খাতে সফটওয়্যার তৈরি, ডেটা বিশ্লেষণ, এবং গ্রাহক পরিষেবাতেও AI ব্যবহৃত হচ্ছে।
কৃষিতেও AI-এর মাধ্যমে শস্য উৎপাদন, সেচ ব্যবস্থা, এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের মতো কাজগুলো আরও কার্যকরভাবে করা সম্ভব।
কিন্তু, AI-এর কারণে আমাদের দেশের শ্রমিকদের চাকরি হারানোর ঝুঁকিও রয়েছে। বিশেষ করে, যারা কম দক্ষতাসম্পন্ন এবং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ করেন, তাদের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা বেশি। তাই, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
আমাদের কর্মীদের AI-এর সাথে সম্পর্কিত নতুন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে, যাতে তারা প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। একইসঙ্গে, সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের কর্মসংস্থান সুরক্ষায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক্ষেত্রে, AI-এর সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে কিভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং স্টার্টআপদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা AI-নির্ভর অর্থনীতির দিকে আরও দ্রুত অগ্রসর হতে পারি।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে কর্মসংস্থান হারানো একটি বৈশ্বিক সমস্যা, তবে প্রস্তুতি ও উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন