কোপেনহেগেন: পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনে নতুন দিগন্ত।
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন, শুধু সুন্দর শহর হিসাবেই পরিচিত নয়, বরং পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সম্প্রতি, শহরটি ‘কোপেনপে’ নামে একটি নতুন উদ্যোগ শুরু করেছে, যা পরিবেশ সচেতন পর্যটকদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে উৎসাহিত করছে।
এই অভিনব ধারণার মূল উদ্দেশ্য হলো, পর্যটকদের সবুজ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত করা এবং ভ্রমণের সময় পরিবেশের উপর তাদের প্রভাব কমানো।
কোপেনপে মূলত একটি পুরস্কার-ভিত্তিক ব্যবস্থা। এখানে, পর্যটকেরা পরিবেশ-বান্ধব কাজ করে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কার জিতে নিতে পারেন।
যেমন – সাইকেলে চড়ে কোনো জাদুঘরে গেলে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ, অথবা সমুদ্র থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে একটি বিনামূল্যে কায়াকিং-এর অভিজ্ঞতা লাভ করা। এছাড়াও, হাঁটাচলার মাধ্যমেও কফি বা অন্যান্য পানীয় বিনামূল্যে পাওয়া যেতে পারে।
এই ধরনের কার্যক্রমগুলো পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার আগ্রহ বাড়ায় এবং শহরটিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করে।
এই প্রকল্পের আওতায়, পর্যটকদের সবুজ জীবনযাপনের প্রমাণ হিসেবে ছবি বা রসিদ জমা দিতে হয়। এর বিনিময়ে তারা বিনামূল্যে ক্যানাল ট্যুর, কনসার্টে প্রবেশ, অথবা কার্লসবার্গ-এর মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের বিয়ার উপভোগ করতে পারেন।
কোপেনহেগেনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, পুরস্কারগুলো নির্বাচন করা হয়েছে, যা ডেনিশ জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে। এখানকার উন্নত সাইকেল অবকাঠামো এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিলে, এই শহরের পরিবেশ-সচেতনতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
কোপেনপে-এর সাফল্যের একটি বড় প্রমাণ হলো, এই প্রকল্পের কারণে সাইকেল ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রকৃতির প্রতি তাদের আকর্ষণ তৈরি করেছে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা ও পরিবেশবিদরা মনে করেন, কোপেনপে-এর মতো উদ্যোগ শহরটিকে আরও বাসযোগ্য করে তোলে এবং পর্যটকদের জন্য একটি উপভোগ্য অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
কোপেনপে-এর সঙ্গে বর্তমানে প্রায় নব্বইটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাদুঘর, গ্যালারি, বোট পরিষেবা এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান।
পর্যটকেরা এই স্থানগুলোতে গিয়ে পরিবেশ-বান্ধব কাজ করে পুরস্কার জেতার সুযোগ পান। উদাহরণস্বরূপ, পর্যটকেরা ন্যাশনাল মিউজিয়াম অথবা ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারিতে যেতে পারেন, অথবা গোবোট বা গ্রিন কায়াকের মতো সংস্থার সাথে বিনামূল্যে বোট অথবা কায়াক রাইডের সুযোগ নিতে পারেন।
কোপেনপে-এর ধারণাটি পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, এটি তাদের শহরটিকে নতুনভাবে অনুভব করতে সাহায্য করেছে এবং পরিবেশ সম্পর্কে আরও সচেতন করেছে।
পর্যটকদের উৎসাহিত করার জন্য, কোপেনপে-এর আওতায় বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, এলসিনোরে সাইকেল চালিয়ে গিয়ে ক্রোনবার্গ ক্যাসেলে বিনামূল্যে প্রবেশ, অথবা কোনো যোগা ক্লাসে অংশ নেওয়া।
কোপেনহেগেন কর্তৃপক্ষের মতে, টেকসই পর্যটনের ধারণাটি ডেনিশ সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোপেনপে-এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে, শহরটি কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে চায়।
শুধু কোপেনহেগেনই নয়, বিশ্বের অন্যান্য শহরও টেকসই পর্যটনের দিকে ঝুঁকছে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ‘মালামা হাওয়াই’ তেমনই একটি উদাহরণ, যেখানে পর্যটকদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
কোপেনপে-এর সাফল্য অন্যান্য দেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে, পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব। একইসঙ্গে, এটি শহরগুলোকে আরও বাসযোগ্য এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক