প্রচণ্ড গরমের সময়ে ‘হিট ডোম’ : কেন বাড়ছে এই সমস্যা, কেমন করে বাঁচবেন?
গ্রীষ্মকাল আসা মানেই যেন তীব্র গরমের আগমন। বিশ্বের অনেক দেশেই এখন তাপপ্রবাহের প্রভাব বাড়ছে, যার মূল কারণ হলো ‘হিট ডোম’ নামক একটি আবহাওয়ার ঘটনা। এই ‘হিট ডোম’ (তাপীয় গম্বুজ) আসলে কী? এটি কীভাবে গ্রীষ্মের আবহাওয়াকে নতুন রূপ দিচ্ছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হিট ডোম: একটি জটিল প্রক্রিয়া
আবহাওয়াবিদরা ‘হিট ডোম’ শব্দটির মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের একটি বিশেষ পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। যখন উচ্চ চাপযুক্ত বাতাস একটি বিশাল অঞ্চলে স্থির হয়ে যায়, তখন এটি অনেকটা গম্বুজের মতো আকার ধারণ করে। এই গম্বুজ ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অঞ্চলের বাতাসকে আট’কে রাখে, ফলে তাপ বাইরে যেতে পারে না। মেঘ তৈরি হতেও বাধা দেয় এই প্রক্রিয়া, যার ফলে আকাশ থাকে রৌদ্রোজ্জ্বল এবং তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে।
এই হিট ডোম তৈরি হওয়ার মূল কারণ হলো জেট স্ট্রিমের গতিপথ পরিবর্তন। জেট স্ট্রিম হলো শক্তিশালী, দ্রুত-বেগে প্রবাহিত বাতাসের একটি ধারা, যা সাধারণত পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহ যখন দুর্বল হয়ে যায় বা এর গতিপথে পরিবর্তন আসে, তখন উচ্চ চাপযুক্ত এলাকা তৈরি হয়ে হিট ডোম তৈরি হয়। এছাড়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণেও এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিট ডোম আরও বেশি তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। উষ্ণ সমুদ্র এবং ভূমির কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিট ডোমের প্রভাব আরও বাড়ছে। এছাড়াও, মাটির আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় শীতলীকরণের প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জেট স্ট্রিমের আচরণেও পরিবর্তন আসছে, যা হিট ডোম তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে, তাপপ্রবাহের ঘটনাগুলো কেবল বাড়ছেই না, বরং অনেক দিন ধরে স্থায়ী হচ্ছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও করণীয়
হিট ডোম-এর কারণে সৃষ্ট তীব্র গরম ও আর্দ্রতা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। গরমের কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরে, যা ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা সৃষ্টি করে। এর ফলে হিট স্ট্রোকের মতো জীবন-হুমকি সৃষ্টিকারী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু এবং যারা বাইরে কাজ করেন, তাদের জন্য এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
এই পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। যেমন:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশেও গরমকালে তাপমাত্রা বাড়ে এবং আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকে। ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানেও হিট ডোম-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই, আগে থেকেই সচেতন থাকা এবং গরম থেকে বাঁচার উপায়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি। স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার, মসজিদ অথবা ছায়াযুক্ত স্থানে আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করে এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রেখে গরমের প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
সতর্কতা ও প্রস্তুতি
গরমের সময়টাতে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন থাকা উচিত। স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়মিত দেখা এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। গরম থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা সবাই সুস্থ থাকতে পারি।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক