বর্ষাকালে আর্দ্রতা বাড়ে, আর এই সময়ে গরমও যেন অসহ্য হয়ে ওঠে। শুধু গরম নয়, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শরীর আরও বেশি অস্বস্তি অনুভব করে।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তন এখন একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। গত ৪০ বছরে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। এর ফলস্বরূপ, গরমের সময় আমাদের শারীরিক কষ্টের পরিমাণও বাড়ছে।
গরমের সময়টাতে বাতাসের জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় ঘাম শুকোতে সমস্যা হয়। শরীর ঠান্ডা করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে গরম আরও বেশি লাগে।
যখন বাতাসের জলীয় বাষ্প বেশি থাকে, তখন শরীরের ঘাম সহজে বাষ্পীভূত হতে পারে না। ফলে গরমের অনুভূতি আরও তীব্র হয়। এই পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোক ও হিট ক্লান্তি-এর মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতাও বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা বাড়ে, তখন পুকুর, নদী ও অন্যান্য জলাশয় থেকে বেশি জলীয় বাষ্প বাতাসে মিশে যায়।
এর ফলে আর্দ্রতা বেড়ে যায় এবং গরম আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তন শুধু একটি অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। উষ্ণায়ন বৃদ্ধির কারণে রাতের বেলায়ও গরম কমছে না, যা শরীরের জন্য স্বস্তিদায়ক হওয়ার পরিবর্তে অস্বস্তি বাড়ায়।
রাতের বেলা কংক্রিট ও অ্যাসফল্টের তৈরি রাস্তা ও ভবনগুলি তাপ ধরে রাখে, যা দিনের বেলায় আরও বেশি গরম সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্দ্রতা বাড়ার কারণে আমাদের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। গরম থেকে বাঁচতে হলে পর্যাপ্ত জল পান করা, হালকা পোশাক পরা এবং সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা জরুরি।
এছাড়া, ফ্যান ও এয়ার কন্ডিশনারের (air conditioner) ব্যবহার এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। গরম বেশি পড়লে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে কিছুক্ষণ পরপর ঠান্ডা পানিতে গোসল করা যেতে পারে।
বাংলাদেশেও গরম এবং আর্দ্রতা একটি সাধারণ বিষয়। বর্ষাকালে বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আর্দ্রতা বাড়ে, যা জনজীবনকে ব্যাহত করে।
তাই, এই পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষার জন্য সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া খুব জরুরি। স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া, গরম থেকে বাঁচতে স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ উপায়গুলোও কাজে লাগানো যেতে পারে।
আর্দ্রতা বাড়ার এই সমস্যা মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরি করা এবং সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক