১0২ বছর বয়সী হাওয়ার্ড টাকার, যিনি এখনও সক্রিয়ভাবে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত, সারা বিশ্বের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম।
ডাক্তার টাকার শুধু একজন চিকিৎসকই নন, তিনি দীর্ঘ ও কর্মময় জীবনের অধিকারী। সম্প্রতি, তিনি দীর্ঘ জীবনের রহস্য নিয়ে মুখ খুলেছেন, যা সকলের জন্য আগ্রহের বিষয়।
ডাক্তার টাকার ১৯47 সালে চিকিৎসা বিজ্ঞান-এ ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর ১৯৫৩ সালে নিউরোলজিতে বিশেষজ্ঞ হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং কোরিয়া যুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে কাজ করেছেন।
শুধু তাই নয়, তিনি ৬৭ বছর বয়সে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে ওহাইও স্টেট বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কোভিড মহামারীর শুরুতে তিনি রোগীদের চিকিৎসা করেছেন এবং বর্তমানে তিনি কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়ান।
এছাড়াও, তিনি চিকিৎসা সংক্রান্ত আইনি বিষয়ে পরামর্শ দেন।
ডাক্তার টাকার-এর কর্মজীবনের এই দীর্ঘ পথচলা সত্যিই অসাধারণ।
তিনি প্রমাণ করেছেন, বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা। সম্প্রতি, তিনি টিকটকে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, যেখানে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
তাঁর নাতি এবং বন্ধুর তৈরি একটি তথ্যচিত্রে (ডকুমেন্টারি) তাঁর জীবন ও কর্ম তুলে ধরা হয়েছে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডাক্তার টাকার তাঁর দীর্ঘ জীবনের গোপন রহস্যগুলো তুলে ধরেন।
তাঁর মতে, দীর্ঘ জীবনের মূল চাবিকাঠি হল জ্ঞান অর্জন ও সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা। এর সাথে, তিনি মাঝে মাঝে হালকা পানীয় উপভোগ করেন।
তিনি মনে করেন, বার্ধক্যে উপনীত হলেও কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত নয়।
ডাক্তার টাকার-এর মতে, যারা তাঁদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পেশায় আছেন, তাঁদের নতুন পেশা খুঁজে নেওয়া উচিত।
তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করেন, যেখানে এক নারী অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে অল্প বয়সে স্ট্রোক করেছিলেন।
ডাক্তার টাকারের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের তিনটি মূল মন্ত্র হলো: শারীরিক ও মানসিক ভাবে সক্রিয় থাকা, ধূমপান থেকে দূরে থাকা এবং বিদ্বেষ বা ঘৃণা থেকে মুক্ত থাকা।
তিনি মনে করেন, ঘৃণা মানুষকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়।
ডাক্তার টাকার-এর মতে, বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের মধ্যেও ধূমপানের প্রবণতা আগের মতোই রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, একসময় চিকিৎসকেরা রোগীদের ধূমপানের পরামর্শ দিতেন, যা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তাঁর ধারণা, ভবিষ্যতে গাঁজার (marijuana) ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
তবে, মদ্যপানের বিষয়ে তাঁর পরামর্শ হলো, সবকিছুই পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত।
তিনি ব্যক্তিগতভাবে ‘ওয়াইন, নারী এবং গান’-এর ধারণায় বিশ্বাসী, তবে স্বাস্থ্যগত কারণে মদ্যপানের বিষয়ে বর্তমানে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়।
ডাক্তার টাকার মনে করেন, খাদ্যাভ্যাস দীর্ঘ জীবনে প্রভাব ফেলে।
তিনি কোনো বিশেষ ডায়েটে বিশ্বাস করেন না, তবে প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনিযুক্ত খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি সাধারণত সকালে ফল ও টোস্ট খান। দুপুরে তাঁর তেমন ক্ষুধা থাকে না এবং রাতের খাবারে মাছ, মুরগি অথবা মাঝে মাঝে স্টেক ও সবজি খান। হালকা পানীয় তাঁর খাদ্যতালিকায় যোগ হয়।
শারীরিক কার্যকলাপের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভারী ব্যায়াম করা কঠিন হতে পারে, তবে হাঁটা, জগিং, অথবা অন্যান্য হালকা ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী।
ডাক্তার টাকার-এর মতে, মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শখের গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি এখনো তুষার-জুতা পরে হাঁটেন, যদিও বর্তমানে এটি তাঁর জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ।
দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী তাঁকে সংযমী রেখেছেন এবং তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া অত্যন্ত গভীর।
বন্ধুত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, বন্ধুদের সান্নিধ্য মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।
ডাক্তার টাকার-এর মতে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের আচরণে পরিবর্তন আসে, যা সব সময় সুখকর হয় না।
তবে তিনি জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখেন।
তিনি মনে করেন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ভয় পাওয়া উচিত নয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে আধুনিক ইমেজিং প্রযুক্তি (সিটি স্ক্যান ও এমআরআই)-এর উন্নতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে রোগ নির্ণয় সহজ হয়েছে।
তবে, তিনি তাঁর ছাত্রদের সব সময় রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস জানার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন।
ডাক্তার টাকার-এর মতে, দীর্ঘ জীবন লাভের ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস বা রুটিনের চেয়ে জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখা বেশি জরুরি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক