গরমের তীব্রতা বাড়ছে, আর তার সাথে বাড়ছে আইসক্রিমের চাহিদা। ভারতের রাজস্থান রাজ্যের একটি ছোট্ট শহর, গ্যাংগাপুর, এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে দারুণভাবে। এক সময়ের কৃষিপ্রধান এই শহরটি এখন পরিচিতি লাভ করেছে ‘আইসক্রিম রাজ্যের’ রূপে।
এখানে তৈরি হয় অত্যাধুনিক আইসক্রিম ভ্যান, যা সারা দেশ এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সরবরাহ করা হয়।
গ্যাংগাপুরের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষকদের বিকল্প আয়ের সন্ধান। এক সময় এই অঞ্চলের কৃষকরা পানির অভাবে প্রায়ই ক্ষতির শিকার হতেন। শাহরুক শাহ নামের এক তরুণ জানান, তাঁর বাবাও একসময় কৃষিকাজ ছেড়ে আইসক্রিম ব্যবসার দিকে ঝুঁকেছিলেন।
এরপর থেকেই যেন গ্যাংগাপুরের মোড় ঘুরে যায়।
শহরের প্রধান সড়কের পাশে এখন সারি সারি গ্যারেজ, যেখানে তৈরি হয় আকর্ষণীয় ডিজাইনের আইসক্রিম ভ্যান। এই ভ্যানগুলোতে থাকে উজ্জ্বল আলো, আকর্ষণীয় সাইনবোর্ড এবং আধুনিক সব সরঞ্জাম।
স্থানীয় বাজারের দোকানগুলোতেও এখন আইসক্রিম ব্যবসার প্রয়োজনীয় জিনিস – কুলার, মিক্সিং মেশিন, সিরাপ ও চামচ-এর ছড়াছড়ি।
গ্যাংগাপুরের এই সাফল্যের মূল কারণ হলো, এখানকার ব্যবসায়ীরা বাজারের চাহিদাটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। শাহরুক শাহ এখন নিজে আইসক্রিম বিক্রি করেন, এবং তাঁর তৈরি ভ্যানগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়।
শুধু তিনিই নন, অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, এবং তাঁরা হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করেন।
স্থানীয় ইউটিউবার বাবা রাইচাঁদ গ্যাংগাপুরের ভ্যান তৈরির কারখানাগুলোর ভিডিও তৈরি করেন। তাঁর মতে, বর্তমানে শহরে ২০০টির বেশি ভ্যান তৈরির কারখানা রয়েছে, যা তিন বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
এই ভ্যানগুলো পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দেশগুলোতেও রপ্তানি করা হচ্ছে। শাহরুক শাহের হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে গ্যাংগাপুরে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ আইসক্রিম ভ্যান তৈরি হয়েছে।
আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা, আশিস সুওয়ালকা, যিনি এখন উদয়পুরে থাকেন, তাঁর তিনটি আইসক্রিম ভ্যান রয়েছে।
তাঁর মতে, মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং সবারই মিষ্টিমুখ করার ইচ্ছা রয়েছে। গ্যাংগাপুরের এই সাফল্যের গল্পটি বাংলাদেশের জন্যেও শিক্ষণীয় হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের কৃষকরাও প্রায়ই ক্ষতির শিকার হন। গ্যাংগাপুরের মতো, বাংলাদেশেও যদি কৃষকদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি করা যায়, তাহলে তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক