মহাকাশে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station – ISS) বায়ু লিক (air leak) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগে নাসা (NASA)। সম্প্রতি এই সমস্যার সমাধানে নতুন মোড় এসেছে, যা সম্ভবত আরও গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, একটি নতুন বেসরকারি মহাকাশ অভিযান, ‘Axiom Space Mission 4’ বা Ax-4, বুধবার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা শুরু করেছে।
এই অভিযানের প্রধান আকর্ষণ হলো, এতে প্রথমবারের মতো ভারতের শুভানশু শুক্লা, পোল্যান্ডের স্লাওস উজনাস্কি-ভিসনিয়েভস্কি, এবং হাঙ্গেরির টিবোর কাপু নিজ নিজ দেশের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।
প্রায় দু’সপ্তাহের এই মিশনে তাঁরা প্রায় ৬০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন।
কিন্তু এই সাফল্যের মাঝেও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মহাকাশ স্টেশনের বায়ু লিকের সমস্যা। রাশিয়ার তৈরি ‘জভেজদা’ মডিউলে (Zvezda module) ২০১৪ সাল থেকে সামান্য বায়ু লিকের (air leak) সমস্যা দেখা যায়।
প্রথমে বিজ্ঞানীরা এর কারণ খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
জানা যায়, এই লিক মূলত একটি টানেলের (transfer tunnel) মাধ্যমে হচ্ছিল, যা কার্গো এবং সরবরাহ বহনকারী মহাকাশযানের ডকিং পোর্টের সঙ্গে যুক্ত।
সমস্যা সমাধানে নাসা এবং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, রসকসমস (Roscosmos) চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে তাঁদের মধ্যে মতের অমিল রয়েছে। নাসার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিস্থিতি নিরাপদ নয়, কিন্তু রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্যক্রম চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা নেই।
নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথমে এই লিক ধীরে ধীরে বাড়ছিল, কিন্তু সম্প্রতি তা কমে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, হয়তো মডিউলের বাইরের দেওয়ালে ফাটল বন্ধ করার চেষ্টা সফল হয়েছে।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এর ফলে ভেতরের দেওয়ালে নতুন করে লিক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
যদি তা হয়, তাহলে পুরো স্টেশনটিই বায়ুশূন্য হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে।
উভয় পক্ষই এর কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে।
তবে, এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য, উভয় সংস্থাই বর্তমানে স্থানান্তরণ টানেলের চাপ কমিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে।
এদিকে, এই সমস্যার সমাধান না হওয়া সত্ত্বেও, Ax-4 মিশন সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
একই সময়ে, নাসা তাদের পরবর্তী ক্রু মিশন, ‘ক্রু-১১’ (Crew-11)-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা সম্ভবত জুলাই মাসেই শুরু হবে।
এই মিশনে নাসার নভোচারী জেনা কার্ডম্যান এবং মাইক ফিংকে, জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার নভোচারী কিমিয়া ইউই, এবং রাশিয়ার কসমোনট ওলেগ প্লাটোনভ অংশ নেবেন।
মহাকাশ স্টেশনে বায়ু লিকের সমস্যা বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এর সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN