ফ্লোরিডার এক মনোমুগ্ধকর জগৎ: বাইসকান ন্যাশনাল পার্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত বাইসকান ন্যাশনাল পার্ক, যা প্রকৃতির এক অসাধারণ নিদর্শন। এই পার্কটি কেবল একটি সাধারণ উদ্যান নয়, বরং এটি প্রকৃতির এক বিশাল জলময় রাজ্য।
এখানকার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা জুড়েই রয়েছে জলরাশি, যা এটিকে অন্য সব জাতীয় উদ্যান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তোলে। যারা জল ভালোবাসেন, বন্যজীবন দেখতে পছন্দ করেন, অথবা সমুদ্রের শব্দ শুনতে শুনতে রাতের আকাশ উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য বাইসকান ন্যাশনাল পার্ক একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
এই পার্কের প্রধান আকর্ষণগুলো হলো এর ম্যানগ্রোভ বন, প্রবাল প্রাচীর এবং ঐতিহাসিক জাহাজগুলোর ধ্বংসাবশেষ। এখানে কায়াকিং করে ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে ঘুরে আসা যায়, আবার ডুবুরি হয়ে প্রবাল প্রাচীরের কাছাকাছি যাওয়া বা পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোও সম্ভব।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বোট ট্যুর, ক্যাম্পিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।
কিভাবে যাবেন?
এই পার্কে যাওয়ার প্রধান উপায় হলো নৌকায় অথবা গাড়িতে। আকাশপথে ভ্রমণ করলে, মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (MIA) হলো সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর, যা পার্ক থেকে প্রায় ৫০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। এরপর, ফ্লোরিডা টার্নপিক অথবা ইউএস হাইওয়ে ১ ধরে আপনি সহজেই পার্কটিতে পৌঁছাতে পারবেন।
তবে মনে রাখতে হবে, পার্কের ভেতরে পাকা রাস্তার পরিমাণ খুবই কম, মাত্র এক মাইল। দ্বীপ এবং ক্যাম্পগ্রাউন্ডগুলোতে যেতে হলে নৌকার প্রয়োজন হয়।
কখন যাবেন?
ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাইসকান ন্যাশনাল পার্কে ভ্রমণের সেরা সময়। এই সময়ে দক্ষিণ ফ্লোরিডায় শুষ্ক আবহাওয়া থাকে, যা বোটিং, স্নরকেলিং, কায়াকিং এবং প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য আদর্শ। সাধারণত শীতকাল এবং বসন্তের শুরুটা এখানে বেশ আরামদায়ক থাকে।
এই সময় তাপমাত্রা হালকা থাকে এবং সমুদ্র শান্ত থাকে। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে পর্যটকদের ভিড় একটু বেশি থাকে। মে থেকে অক্টোবর মাসে গরম ও আর্দ্রতা বেশি থাকে, সেই সাথে দুপুরের দিকে বজ্রঝড়ের সম্ভাবনাও থাকে।
যারা ভিড় এড়াতে চান, তারা সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে ভ্রমণ করতে পারেন।
ভ্রমণের আগে কিছু জরুরি বিষয়:
এই পার্কে উপভোগ করার মতো আরও অনেক কিছু আছে। এখানে আসা পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো এখানকার ফ্লোরিডা রিফ, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীরগুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনি যদি স্কুবা ডাইভিং ভালোবাসেন, তাহলে স্বচ্ছ নীল জলে ডুব দিয়ে এখানকার রঙিন মাছ, কচ্ছপ এবং নানা প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর দর্শন পেতে পারেন।
এছাড়া, ম্যানগ্রোভ-ঘেরা খাঁড়িগুলোতে কায়াকিং করা অথবা জেট্টি ট্রেইলে হেঁটেও প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে।
থাকার ব্যবস্থা:
এখানে থাকার জন্য আপনি মিয়ামিতে একটি হোটেল ভাড়া করতে পারেন এবং সেখান থেকে দিনে এসে পার্কটি ঘুরে যেতে পারেন। মিয়ামির “দ্য এলসার হোটেল” একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। অথবা, আপনি যদি ক্যাম্পিং করতে চান, তাহলে বোটের মাধ্যমে এলিয়ট কি (Elliott Key) বা বোকা চিটা কিতে (Boca Chita Key) যেতে পারেন।
বোকা চিটা কি-তে ক্যাম্পিং করা বেশি জনপ্রিয়, তবে এলিয়ট কি-তে সুযোগ-সুবিধা বেশি।
খাবার:
পার্কের ভেতরে কোনো রেস্টুরেন্ট নেই, তাই নিজের খাবার সাথে নিয়ে যাওয়াই ভালো। আপনি চাইলে ডান্তে ফাসসেল ভিজিটর সেন্টার, এলিয়ট কি এবং বোকা চিটা কিতে উপলব্ধ পিকনিক এরিয়াতে বারবিকিউ করতে পারেন।
বাইসকান ন্যাশনাল পার্ক যেন প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়। এখানকার জলরাশি, ম্যানগ্রোভ বন আর জীববৈচিত্র্য একে অনন্য করে তুলেছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মতো, প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদগুলো আমাদের রক্ষা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure