ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শেয়ার বাজারে। বিশেষ করে চীন, কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত। মঙ্গলবার থেকে এই শুল্কগুলি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে, যার ফলে বিশ্ব অর্থনীতির উপর একটি চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার সোমবার সকালে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এস&পি ৫০০ সূচক ০.৫ শতাংশ এবং ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক সূচকও ০.৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উত্থান সাময়িক হতে পারে, কারণ শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কারণ।
চীনের পক্ষ থেকেও এই শুল্কের জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। চীনের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বেইজিং প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। এর পাশাপাশি, চীনা প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে নতুন করে অনেক বেশি অর্ডার এসেছে, কারণ ব্যবসায়ীরা চাইছে শুল্ক বৃদ্ধির আগেই পণ্য আমদানি করতে।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। ইন্টেল (Intel) -এর শেয়ার ৫ শতাংশ বেড়েছে। শোনা যাচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী এনভিডিয়া (Nvidia) এবং ব্রডকম (Broadcom) -এর সঙ্গে ইন্টেলের উৎপাদন চুক্তি হতে পারে। ফ্যাশন ব্র্যান্ড ক্যাপরি হোল্ডিংস (Capri Holdings)-এর শেয়ার ৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শোনা যাচ্ছে, তারা ১.৬ বিলিয়ন ডলারে তাদের ভার্সেস (Versace) ব্যবসা প্রাদার (Prada) কাছে বিক্রি করার কাছাকাছি রয়েছে। অন্যদিকে, মুদি দোকানগুলির মধ্যে ক্রোগার (Kroger)-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদত্যাগের কারণে তাদের শেয়ার ১.৩ শতাংশ কমেছে।
এশিয়ার বাজারেও মিশ্র প্রভাব দেখা গেছে। হংকং-এর শেয়ার বাজারে চীনা বাবল টি চেইন মিক্সিউ বিংচেং-এর (Mixue Bingcheng) শেয়ারের দাম ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। তাদের প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে প্রায় ৪৪৪ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার খবর পাওয়া গেছে, যা স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে, সাংহাই কম্পোজিট সূচক ০.১ শতাংশ কমেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউরোপের বাজারেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপে মূল্যস্ফীতি ২.৪ শতাংশে নেমে আসায় ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এমন ধারণার কারণে জার্মানির ড্যাক্স (DAX) সূচক ২.৪ শতাংশ বেড়েছে, প্যারিসের সিএসি ৪০ (CAC 40) ১.৪ শতাংশ এবং ব্রিটেনের এফটিএসই১০০ (FTSE 100) ০.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে, বিটকয়েনের দামও বেড়েছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ অ্যাকাউন্টে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে একটি কৌশলগত রিজার্ভ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানানোর পরেই বিটকয়েনের দাম বেড়ে যায়। সোমবার সকালে বিটকয়েনের দাম প্রায় ৯৩,০০০ ডলারে পৌঁছেছিল, যা শুক্রবারের তুলনায় বেশ উল্লেখযোগ্য।
এই আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে, তা স্থানীয় বাজারেও প্রভাব ফেলবে, যা মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস