ইরান-যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, তেহরান-সমর্থিত হ্যাকাররা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উপর সাইবার হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক, প্রতিরক্ষা ঠিকাদার এবং তেল কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি, তবে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা সম্ভাব্য সাইবার হামলার বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (Department of Homeland Security) এবং সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামো নিরাপত্তা সংস্থা (Cybersecurity and Infrastructure Security Agency – CISA) ইতোমধ্যে সতর্কবার্তা জারি করেছে।
তারা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পাইপলাইন বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের হ্যাকাররা সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল এবং প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য সাইবার হামলা চালায়। যদিও চীনের মতো উন্নত প্রযুক্তি তাদের নেই, তবুও তারা তাদের সীমিত সামর্থ্য ব্যবহার করে প্রায়ই এই ধরনের চেষ্টা করে।
আর্নি বেলিনি নামক একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী বলেছেন, সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা অনেক বেশি, কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা তাদের দুর্বল করে তোলে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাইবার হামলাগুলো সামরিক কার্যক্রমের চেয়ে অনেক সস্তা।
সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ট্রাস্টওয়েভের গবেষকদের মতে, ইরান সমর্থিত ৬০টির বেশি হ্যাকিং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে কিছু গ্রুপের সঙ্গে সামরিক বা গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশ থাকতে পারে।
আবার কিছু গ্রুপ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করে। এসব হ্যাকাররা অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক উভয় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
যেমন, গত বছর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর, হ্যাকাররা ইসরায়েলিদের জরুরি সতর্কীকরণ অ্যাপে ঢুকে মিথ্যা খবর প্রচার করে ব্যবহারকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সাইবার নিরাপত্তা খাতে বাজেট কমানো হয়েছিল। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিরাপত্তা প্রোগ্রামের কর্মী ছাঁটাই করা হয়।
বর্তমানে, বিশেষজ্ঞরা সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য শিক্ষা এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাইবার নিরাপত্তা দুর্বল হলে তা বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আর্থিক খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, বাংলাদেশেরও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস