ইউরোপে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ায় সুদের হার কমানোর পথে হাঁটতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ইউরোপের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে ২.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই খবর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এর প্রভাব বিশ্ব বাণিজ্য এবং আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোর উপর পড়তে পারে।
ফেব্রুয়ারি মাসের এই হিসাব পাওয়া গেছে ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারী ২০টি দেশের অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে। জানুয়ারিতে এই হার ছিল ২.৫ শতাংশ। জ্বালানি মূল্য হ্রাস এবং ফ্রান্সের মতো প্রধান অর্থনীতির দেশে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফ্রান্সের মূল্যস্ফীতি এখন মাত্র ০.৯ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য ইসিবি নিয়েছে, এই ফল তার একটি ইতিবাচক দিক। আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ইসিবি তাদের বেঞ্চমার্ক সুদের হার ০.২৫ শতাংশ কমাতে পারে, যা বর্তমানে ২.৭৫ শতাংশ রয়েছে। সুদের হার কমলে সাধারণত ঋণ নেওয়া সহজ হয়, যা বাড়ি কেনা বা ব্যবসার প্রসারের জন্য সহায়ক হতে পারে।
তবে, ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে ইউরোজোনের অর্থনীতি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল। ভোক্তারা তাদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে এখনো কিছুটা সতর্ক, কারণ তারা মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন শুল্কের কারণেও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। ফ্রান্সের রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং জার্মানির নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়াও ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
এসএন্ডপি গ্লোবালের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে ইউরোজোনের অর্থনীতি সামান্য বেড়েছে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ইসিবি প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে সুদের হার কমানোর বিষয়ে আরও কোনো ইঙ্গিত দেন কিনা, সেদিকে সবার নজর থাকবে। যদিও ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ১০.৬ শতাংশে পৌঁছেছিল, তবে এখনো কিছু ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, পরিষেবা খাতের খরচ, যেমন – সেলুন, হোটেল, কনসার্ট এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি এখনো ৩.৭ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে।
ইসিবি’র একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা সম্প্রতি বলেছেন, অর্থনীতির কিছু পরিবর্তন সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে। ইসিবির নির্বাহী বোর্ডের সদস্য ইসাবেল স্কনাবল মনে করেন, এমন একটি সময় সম্ভবত শেষ হতে চলেছে যখন মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিগুলো কমে আসছিল।
ইউরোপের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপ আমাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। তাই, সেখানকার অর্থনৈতিক পরিবর্তন আমাদের রপ্তানি, আমদানি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ইউরোপের সুদের হার কমালে, বিশ্ব অর্থনীতিতে তারল্য বাড়বে, যা আমাদের দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সুতরাং, ইউরোপের মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হারের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা এবং সুযোগ দুটোই নিয়ে আসতে পারে। সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের এই বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: এপি