বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনে কর্মজীবনের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে কাজের চাপ বেশি, সেখানে এই ভারসাম্য বজায় রাখা আরও কঠিন। অনেক সময় কর্মীরা তাদের ব্যক্তিগত জীবনকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র কাজের প্রতি মনোযোগ দেন, যার ফলস্বরূপ মানসিক চাপ, ক্লান্তি এবং সম্পর্কগুলোতে ফাটল ধরতে পারে।
আপনি কি একজন ব্যস্ত কর্মী? আপনারও কি মনে হয় জীবনটা কাজের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে? তাহলে কর্ম ও জীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করা যাক।
কর্মজীবনের চাপ কমাতে এবং জীবনের মান উন্নত করতে কিছু কার্যকরী উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. **কাজের সময়সীমা নির্ধারণ (Set Strict Work Hours):**
দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করুন। অফিসের কাজ শেষ হওয়ার পরে, অফিসের ইমেইল এবং অন্যান্য কাজের অ্যাপস (Apps) বন্ধ করে দিন। এর ফলে আপনি ব্যক্তিগত জীবনে মনোযোগ দিতে পারবেন এবং মানসিক শান্তি খুঁজে পাবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি সন্ধ্যা ৬টার পরে অফিসের কোনো কাজ করবেন না, এমন একটি নিয়ম তৈরি করতে পারেন।
২. **কাজের সময়ের নমনীয়তা (Be Flexible with Work Hours):**
কাজের সময় কিছুটা নমনীয় হলে অনেক সময় উপকার পাওয়া যায়। আপনার যদি দিনের বেলা কিছু ব্যক্তিগত কাজ থাকে, তবে সেটা সেরে নিয়ে রাতের বেলা কাজ করতে পারেন। এতে আপনার কাজও হবে, আবার ব্যক্তিগত জীবনকেও সময় দিতে পারবেন।
৩. **সময় মতো বিরতি নিন (Take Breaks):**
কাজের মাঝে বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি। বিরতি আপনাকে পুনরায় কাজের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। এই সময়ে আপনি চা/কফি পান করতে পারেন, বন্ধুদের সাথে কথা বলতে পারেন অথবা পছন্দের কোনো কাজ করতে পারেন। দুপুরে খাবার খাওয়ার সময়টুকু শুধুমাত্র নিজের জন্য রাখুন।
৪. **অফিসের অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হোন (Snooze/Delete Work Apps):**
কাজের ইমেইল এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনের নোটিফিকেশন (Notification) বন্ধ করে দিন, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে। এতে আপনি কাজের চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারবেন এবং পরিবারের সঙ্গে ভালোভাবে সময় কাটাতে পারবেন।
৫. **কর্মক্ষেত্র এবং ব্যক্তিগত জীবনের স্থান আলাদা করুন (Designated Workspace):**
বাড়িতে কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করুন। সেই স্থানটি শুধুমাত্র কাজের জন্য ব্যবহার করুন। কাজ শেষে সেই স্থান ত্যাগ করুন, যাতে আপনার মন কাজের জগৎ থেকে বিশ্রাম নিতে পারে।
৬. **নিজের জন্য সময় বের করুন (Self-Care):**
নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন। বই পড়া, গান শোনা, অথবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া – এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়।
৭. **সঠিকভাবে পরিকল্পনা করুন (Plan Vacation):**
বছরে অন্তত দু’বার ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন। এতে আপনি মানসিক শান্তি পাবেন এবং নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে পারবেন।
৮. **পরিবর্তন আনুন (Use Transitions):**
কাজ শেষ করার পর অন্য কিছু করার মাধ্যমে মনকে কাজের জগৎ থেকে সরিয়ে আনুন। যেমন, রাতের খাবার তৈরি করা অথবা হালকা ব্যায়াম করা।
কর্ম ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন আলাদা, তাই নিজের জন্য সঠিক কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। বিভিন্ন কৌশল চেষ্টা করে দেখুন এবং আপনার জন্য যেটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে, সেটি অনুসরণ করুন। মনে রাখবেন, সুখী জীবন যাপনের জন্য কর্মজীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন