ইরানে অস্থিরতা: ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর তেহরানের দুর্বলতার সুযোগ খুঁজছে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার আবহে, প্রতিবেশী দেশ ইরাকের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি তেহরানের শাসকগোষ্ঠীর সম্ভাব্য দুর্বলতার উপর কড়া নজর রাখছে। দীর্ঘদিন ধরে ইরানের শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আসা এই গোষ্ঠীগুলি মনে করছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তবে, তারা পরিস্থিতি বিবেচনা করে খুব সতর্কভাবে তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপগুলো স্থির করতে চাইছে।
ইরাকের উত্তরাঞ্চলে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়েছে এমন কয়েকটি কুর্দি সংগঠন, যারা অতীতে ইরানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। এই অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি বাগদাদের কেন্দ্রীয় সরকার এবং তেহরানের মধ্যে একটা উদ্বেগের কারণ।
এমনকি, সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সীমান্তের কাছাকাছি ঘাঁটি গড়ার কারণে ইরান সরকারের সঙ্গে ইরাকের সম্পর্কেও চিড় ধরেছিল। এর ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালে ইরাক সরকার ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, যেখানে বিদ্রোহীদের নিরস্ত্র করে তাদের ইরানের সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়।
বর্তমানে, এই গোষ্ঠীগুলি রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে ইরানে ক্ষমতার পালাবদল হলে তাদের যেন ব্রাত্য করে রাখা না হয়। তবে, সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, তারা সরাসরি কোনো উত্তর দিতে রাজি হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের এই যুদ্ধ কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে, এই পরিস্থিতিতে কোনো হঠকারী পদক্ষেপ নিলে তা কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর জন্য যেমন বিপদ ডেকে আনতে পারে, তেমনই ইরাক এবং ইরানের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতেও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে আদর্শগত বিভেদ বিদ্যমান। কেউ কেউ বৃহত্তর কুর্দিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে, আবার কেউ ইরানের মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। এই ভিন্নতার কারণে তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি, তারা একসঙ্গে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
কুর্দি সংগঠনগুলোর নেতারা মনে করেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনো বিদেশি শক্তির ক্রীড়ানক হতে চান না। তারা চান, ইরানের ভবিষ্যৎ গঠনে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকুক।
তারা একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ইরান গড়তে চান, যেখানে কুর্দি এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষিত হবে।
এই পরিস্থিতিতে, কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একদিকে যেমন ইরানের শাসকগোষ্ঠীর দুর্বলতার সুযোগ খুঁজছে, তেমনই নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে, তারা আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপগুলো স্থির করার চেষ্টা করছে।
তথ্য সূত্র: রয়টার্স