মা’কে হত্যার অভিযোগে কারাবাসের পর প্যারোলে মুক্তি পাওয়া জিপসি রোজ ব্ল্যাঞ্চার্ড সম্প্রতি মুখ খুলেছেন। মা’র মৃত্যুর ঘটনায় নিজের ভূমিকার জন্য তিনি কিভাবে দায়বদ্ধতা গ্রহণ করেছেন এবং এখন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে কথা বলেছেন।
২০১৫ সালে মা ডি ডি ব্ল্যাঞ্চার্ডের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দ্বিতীয়-ডিগ্রি মার্ডারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, ৩৩ বছর বয়সী জিপসি রোজ ব্ল্যাঞ্চার্ড দীর্ঘ আট বছর কারাভোগের পর প্যারোলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, গত বুধবার (২৬ জুন) ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে তার নীরবতা ভেঙেছেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং ২০২৪ সালের ২৪শে জুন তার প্যারোল শেষ হয়। জিপসি তার পোস্টে লেখেন, “আমি আমার দায়বদ্ধতা গ্রহণ করেছি এবং এখন, আমি আমার জীবনকে ফিরিয়ে নিচ্ছি। যখন আমি আমার সাজার রায় গ্রহণ করি, তখন আমি আমার সিদ্ধান্তের ভারও গ্রহণ করেছিলাম। আমি আমার সময় কাটিয়েছি। সেই দায়বদ্ধতা আমি বছরের পর বছর ধরে বহন করেছি। অতীতের কাছে আমার আর কিছুই পাওনা নেই।
তিনি আরও বলেন, “আমার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় হবে আরোগ্য লাভের, বিকাশের এবং আমার জীবনকে পুনরুদ্ধার করার।
জিপসি রোজের কথায়, “এই মুক্তি। এবং আমি এখন স্বচ্ছতা, শান্তি ও আত্ম-ক্ষমা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। বিচার ব্যবস্থা তার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। মামলাটির এখানেই সমাপ্তি। ডি ডি-র জন্য এটিই ছিল ন্যায়বিচার, এবং আমার জন্যও, যে জীবনে এই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে।
ব্ল্যাঞ্চার্ড তার প্রাক্তন প্রেমিক নিকোলাস গোডেজনের দিকেও ইঙ্গিত করেন, যিনি ২০১৫ সালে ডি ডি-কে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। জিপসি বলেন, গোডেজন “গভীরভাবে বিপর্যস্ত”।
তিনি বলেন, “হ্যাঁ, তিনি একজন গভীর ভাবে বিপর্যস্ত মানুষ। তবে তিনি ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারতেন। আমার অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রভাবিত করার ভূমিকা সত্ত্বেও… নিকোলাস সেই রাতে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটি ছিল একটি পছন্দ, এবং তিনি তার ফলাফলের দায় থেকে মুক্ত নন।
২০১৫ সালের জুনে, গোডেজন ডি ডি-কে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। তখন জিপসি বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন। প্রসিকিউটরদের মতে, জিপসি ছিলেন ‘মানচাউসেন বাই প্রক্সি’ নামক মানসিক রোগের শিকার, যেখানে কোনো ব্যক্তি, সাধারণত মা, তাদের সন্তানের অসুস্থতার মিথ্যা তথ্য দিয়ে অন্যদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেন।
গোডেজনের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে ব্ল্যাঞ্চার্ডের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে দ্বিতীয়-ডিগ্রি মার্ডারে পরিবর্তন করা উচিত।
ব্ল্যাঞ্চার্ডকে হুইলচেয়ারে বসানো হতো, যদিও তিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারতেন। তাকে এমন কিছু ওষুধ সেবন করতে বাধ্য করা হতো যেগুলোর তার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এছাড়া, তিনি যেন ‘মাসকুলার ডিস্ট্রফি’, ‘লিউকেমিয়া’ এবং অন্যান্য অসুস্থতায় ভুগছেন, এমনটা প্রমাণ করতে তার মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে করে বন্ধু ও প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে সহানুভূতি দেখায়।
জিপসি আরও বলেন, “অটিজম/আস্পারজার্স-এর রোগ নির্ণয় তার কৃতকর্মের জন্য কোনো অজুহাত হতে পারে না। মানসিক স্বাস্থ্য জটিল, তবে জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ এবং আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তার ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন বিচারক, কৌঁসুলি, আইনজীবী এবং ১২ জন জুরি সদস্য, যারা অনলাইনে প্রচারিত একই প্রমাণ পর্যালোচনা করেছেন। তার আপিলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, প্রতিটি আদালতই মূল রায়কে সমর্থন করেছে।
তিনি আরও বলেন, “আমি তার কর্মের দায়ভার আর বহন করব না। আমি আমার নিজের দায়ভার গ্রহণ করেছি।
গোডেজনের বিচারের সময়, স্প্রিংফিল্ডের দুইজন মনোবিজ্ঞানী আদালতকে জানিয়েছিলেন যে তারা গোডেজনের অটিজম ধরা পড়েছে। অন্যদিকে, সরকারি কৌঁসুলিরা রবার্ট ডেনিকে পাল্টা সাক্ষী হিসেবে ডেকেছিলেন। পরীক্ষার পর তিনি জানান, গোডেজনের অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার লেভেল ১ রয়েছে।
বর্তমানে গোডেজন মিসৌরির পোটোসি কারেকশনাল সেন্টারে সাজা ভোগ করছেন।
ব্ল্যাঞ্চার্ড অভিযোগ করেছেন, গোডেজনের “অতীতে আঘাত পাওয়া দুর্বল নারীদের ওপর একটি ভয়ঙ্কর প্যাটার্ন ছিল এবং তিনি তাদের তার বিকৃত ফ্যান্টাসির জগতে টেনে নিতেন।
তিনি আরও বলেন, “তিনি নিজেকে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন, যিনি নিয়ন্ত্রণ ও আনুগত্য চান এবং ভালোবাসার ছদ্মাবরণে এই নারীদের নিয়ন্ত্রণ করেন।
তিনি দাবি করেছেন, গোডেজনের সঙ্গে ডন বোওকার নামে এক নারীর সম্পর্ক ছিল, যখন তিনি কারাগারে ছিলেন। ব্ল্যাঞ্চার্ডের মতে, তাদের সম্পর্ক প্রথমে চিঠি লেখার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, পরে তা ভালোবাসার সম্পর্কে রূপ নেয়।
জিপসি লেখেন, “সৌভাগ্যবশত, ডনের মতো আরও অনেকে তাদের পরিচয় হারানোর আগেই নিজেকে বাঁচানোর জন্য চলে যেতে সক্ষম হয়েছিল।
জিপসি জানান, “গোডেজনের কাছ থেকে এটি নতুন কোনো আচরণ নয়।
তিনি আরও যোগ করেন, “তিনি তার ‘আদর্শ অনুগত’ কাউকে খুঁজে চলেছেন, এমন একজন, যে কারাগারের আড়ালে থেকেও তার গভীরতম আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে। কিন্তু সত্যি হলো, অনেক নারী এই মুখোশটি বুঝতে পারছে এবং পালিয়ে যেতে চাইছে। তারা তার শিকার নয়, বরং তারা সবাই জীবিত।
এরপর ব্ল্যাঞ্চার্ড ডন এবং গোডেজনের মধ্যেকার কিছু বার্তা শেয়ার করেছেন, যা ডনের অনুমতিতে প্রকাশ করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
২০১৯ সালের জুনে পাঠানো একটি বার্তায়, গোডেজন ডনকে বলেছিলেন যে তার ‘নিকোলি’ নামক অন্য সত্তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার জন্য তিনি “দুঃখিত”।
প্যারোল শেষ হওয়ার পরে ব্ল্যাঞ্চার্ড বলেছেন, তিনি এখনও ডি ডি-র পরিবারের কথা ভাবেন।
তিনি লেখেন, “আমার কাজের কারণে তাদের যে কষ্ট এবং হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে জন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমি জানি, আমি যা-ই বলি না কেন, তা তাদের আঘাত কমাতে পারবে না বা ডি ডি-কে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। তবে আমি তাদের প্রতি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করতে থাকব।
ব্ল্যাঞ্চার্ড আরও বলেন, যারা তাকে সমর্থন করেছেন এবং যারা সন্দেহ করেছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ।
তিনি লেখেন, “কারণ তোমরা আমার মধ্যে আগুন জ্বালিয়েছিলে। তোমরা আমাকে ভুল প্রমাণ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছ। এবং তোমরা কি জানো? আমি তা করেছি।
তিনি যোগ করেন, “তোমরা বলেছিলে আমি ব্যর্থ হব। কিন্তু তার পরিবর্তে… আমি জেগে উঠছি। আমি তোমাদের দেখাতে যাচ্ছি কিভাবে সেরা জীবন যাপন করতে হয়। আর এখন তোমরা শুধু আমাকে দেখ।
ব্ল্যাঞ্চার্ড তার পোস্টটি শেষ করেন এই হ্যাশট্যাগগুলো দিয়ে: #StillStanding #Unstoppable #WatchMeRise
২০২৩ সালে পিপল ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্ল্যাঞ্চার্ড বলেছিলেন, গোডেজনের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ রাখার অনুমতি নেই এবং তিনি নিজেও তা চান না।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, তাকে এই পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য আমি দায়ী। তবে, হত্যার কাজটিও তার নিজের ছিল। সবারই পছন্দ করার স্বাধীনতা আছে এবং সে তার পথ বেছে নিয়েছিল, তাই সে তার সাজা ভোগ করছে। আমি আমার সাজা ভোগ করেছি এবং এটাই আমার চিন্তা।
তথ্যসূত্র: পিপল