ইরানের তেহরানে অবস্থিত কুখ্যাত এভিন কারাগারে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইরানের বিচার বিভাগ রবিবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
নিহতদের মধ্যে কারা কর্মকর্তা, সৈন্য, বন্দী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গির বিচার বিভাগের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সংস্থা মিজান-এর ওয়েবসাইটে এই তথ্য জানান। তিনি জানান, গত সোমবারের হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন কারাগারের কর্মী, সেনা সদস্য, বন্দী এবং তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসা পরিবারের সদস্যরা।
তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গত ২৩শে জুন, ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগের দিন এই হামলা চালানো হয়। হামলায় কারাগারের কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে ইনফার্মারি, প্রকৌশল ভবন, বিচার বিভাগীয় কার্যালয় এবং দর্শনার্থীদের বিশ্রামাগারও ছিল।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বন্দীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
হামলার দিন, নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ইন ইরান ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে জানায়, কারাগারটি ইরানের শাসকদের বিরোধী মতাদর্শের মানুষের ওপর দমন-পীড়নের প্রতীক, তাই এটি বেসামরিক এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে পার্থক্য করার নীতির লঙ্ঘন।
একই সঙ্গে, তারা জানায়, ইরান সরকার এভিন কারাগারে আটক বন্দীদের রক্ষা করতে এবং হামলার পরে তাঁদের সরিয়ে নিতে, চিকিৎসা সহায়তা দিতে এবং পরিবারের সদস্যদের জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনের ঘটনাস্থলেই চিকিৎসা করা হয়েছে এবং অন্যদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জাহাঙ্গির জানিয়েছেন। এর আগে ইরান সরকার মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
তবে শনিবার তারা নিশ্চিত করেছে যে, শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলি আলী ঘানাৎকার, যিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতেন, তিনিও এই হামলায় নিহত হয়েছেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মাদিও তাঁর অন্যতম শিকার ছিলেন।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর মতে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সামরিক কার্যকলাপের ব্যাপকতা, তীব্রতা এবং সময়কালের কারণে এটিকে যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ই জুন ইসরায়েল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করার লক্ষ্যে হামলা চালায়। এর আগে, ১২ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা এই হামলায় ইসরায়েল প্রায় ৩০ জন ইরানি কমান্ডার ও ১১ জন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে বলে দাবি করে।
এছাড়াও, তারা আটটি পারমাণবিক স্থাপনা এবং ৭২০টির বেশি সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের মতে, এই হামলায় অন্তত ৪১৭ জন বেসামরিক নাগরিকসহ ১,০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইসরায়েলের দিকে ৫০০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর বেশিরভাগই প্রতিহত করা হলেও, কিছু ক্ষেপণাস্ত্র বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে, যার ফলে ২৮ জন নিহত হয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।