আমি গত বিশ বছর ধরে টোকিওতে বসবাস করছি, আর জাপানে ভ্রমণ করার জন্য আমার এক নম্বর পরামর্শ হল— কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ঘুরে বেড়ানো। শুনে হয়তো একটু অদ্ভুত লাগতে পারে, কিন্তু টোকিও শহরটি যেন অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার ভান্ডার।
টোকিও শহর: অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার শহর
পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে অনেক কিছুই বিদ্যমান, কিন্তু আমার মতে, সবচেয়ে আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতাগুলো অপেক্ষা করে থাকে অপ্রত্যাশিত পথে। আপনি যদি শুধু গাইড বই অনুসরণ করে বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে ছুটে যান, তাহলে হয়তো অনেক কিছুই আপনার চোখ এড়িয়ে যাবে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমার বাড়ির কাছের ট্রেন স্টেশনের দু’টি দিক যেন দুটি ভিন্ন জগৎ। উত্তরের গেট দিয়ে বেরোলে, সেখানে সুশৃঙ্খল বাসের জগৎ, বিভিন্ন চেইন শপ, আর স্টারবাকসের মতো পরিচিত দৃশ্য চোখে পড়ে।
কিন্তু দক্ষিণে গেলেই যেন অন্য এক জগৎ—ছোট ছোট রাস্তা, যা হয়তো গাড়ির জন্য উপযুক্ত নয়, আর সেখানে পুরনো বাড়িগুলোর পাশে নানান ধরনের লতাগুল্মের সমাহার।
একদিন, এই অলিগলিতে ঘুরতে ঘুরতে আমার চোখে পড়ল এক কাঠশিল্পীর বাড়ি। লোকটির আসল নাম তো আমি জানি না। তার সঙ্গে দেখাও হয়নি কোনোদিন।
কিন্তু তার বাড়ির বাগানে সৌরকোষের মাধ্যমে চালিত কাঠের তৈরি নানান ধরনের খেলনা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। কাঠের তৈরি একটি পুতুল, যা একটানা আপেল মুখে তোলে, অথবা ছোট ছোট ঘোড়ার একটি সার্কাস, যা সূর্যের আলো না থাকলে থেমে যায়—এগুলো জাপানি সংস্কৃতির এক চমৎকার উদাহরণ।
কাঠশিল্পীর বাড়ি হয়তো কোনো ভ্রমণ গাইডে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যারা সেখানে গিয়েছেন, তাদের কাছে এটি একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
পরিকল্পনাহীন ভ্রমণের গুরুত্ব
আমার বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনেরা যখন এখানে বেড়াতে আসে, তখন তাদের আমরা সাধারণত পরিচিত স্থানগুলোতেই নিয়ে যাই, যা দেখে তারা মুগ্ধ হয়। কিন্তু অনেক বছর পর যখন আমরা পুরোনো দিনের কথা বলি, তখন সেই অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার গল্পগুলোই সবার আগে মনে পড়ে।
যেমন, একটি সাক bar-এ যাওয়া, যেখানে মালিকের কুকুরটি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করত, কিন্তু চলে যাওয়ার সময় তাদের পায়ে কামড়ানোর চেষ্টা করত। অথবা একটি স্থানীয় মন্দিরের পাশের ডাস্টবিনে ইংরেজিতে লেখা ছিল, “Box for FILTH”।
টোকিও যেন অপ্রত্যাশিত ঘটনার শহর। হয়তো এখানে অনেক মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে, অথবা এখানকার সংস্কৃতিই এমন—প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব জগৎ তৈরি করতে চায়। তাই, যারা এখানে বেড়াতে আসেন, তাদের জন্য আমার পরামর্শ হল, কিছু সময় পরিকল্পনা ছাড়া কাটানো।
বিখ্যাত জাদুঘর বা মন্দিরগুলোর পেছনে না ছুটে, শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ান। দেখবেন, এমন কিছু অভিজ্ঞতা আপনার সঙ্গে ঘটবে, যা আপনি আগে কখনো কল্পনাও করেননি।
জাপান যেতে ভিসার প্রয়োজন
জাপানে যেতে হলে ভিসার প্রয়োজন। তাই, ভ্রমণের আগে অবশ্যই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে, জাপান দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
পরিশেষে, টোকিও ভ্রমণের সময় অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সুযোগ রাখা উচিত। হয়তো এই শহরে আপনার জন্য অন্যরকম কিছু অপেক্ষা করছে, যা আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure