সুইজারল্যান্ডের গস্টাড: শীত ও গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রকৃতির নীরবতা ও বিলাসবহুলতার এক অপূর্ব মিলনস্থল
সুইজারল্যান্ড, যা তার মনোরম দৃশ্য, সুউচ্চ পর্বতমালা এবং উন্নত জীবনযাত্রার জন্য বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত, সেখানে গস্টাড নামের একটি স্থান যেন প্রকৃতির নীরবতা আর আধুনিক বিলাসিতার এক অপূর্ব মিলনস্থল। বার্নিজ আল্পসের কোলে অবস্থিত এই আকর্ষণীয় স্থানটি শীতকালে স্কিইং-এর জন্য যেমন জনপ্রিয়, তেমনই গ্রীষ্মকালে এটি হেঁটে বেড়ানো, সাইকেল চালানো এবং বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণের এক আদর্শ গন্তব্য।
গস্টাড কেবল একটি শীতকালীন গন্তব্য নয়, বরং এটি ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক দারুণ সংমিশ্রণ। এখানকার বাড়িগুলো ঐতিহ্যপূর্ণ ‘সিমেন্টাল’ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত, যা দেখলে সুইস সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটে ওঠে। এখানকার রাস্তাগুলো গাড়িমুক্ত হওয়ায় হেঁটে ঘোরার এক চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়।
পর্যটকদের জন্য এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক পাঁচতারা হোটেল, যেখানে তারকামণ্ডিত অতিথিদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে গস্টাড-এর আসল আকর্ষণ হলো এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থানীয় সংস্কৃতি।
গস্টাডের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘গ্লেসিয়ার ৩০০০’। এখানে কেবল কেবল কারের মাধ্যমে প্রায় ১০,০০০ ফুট উচ্চতায় ওঠা যায়, যেখান থেকে আল্পস পর্বতমালার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়াও, এখানে রয়েছে ‘পিক ওয়াক’ নামক একটি ঝুলন্ত সেতু, যা দুটি পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে।
যারা দুঃসাহসিক অভিযান ভালোবাসেন, তাদের জন্য এখানে ‘ভায়া ফেরারাতা’র মতো ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা ও নামার সুযোগ আছে।
গস্টাডের খাদ্যরসিকদের জন্য রয়েছে নানা স্বাদের সম্ভার। এখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে সুইস, ইতালীয় এবং ফরাসি খাবারের স্বাদ নেওয়া যায়। স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি খাবারগুলোর মধ্যে ট্রাউট মাছের পদটি খুবই জনপ্রিয়।
এছাড়াও, এখানকার ‘মোলকেরি’ নামক একটি পনিরের দোকান থেকে ঐতিহ্যবাহী উপায়ে তৈরি পনির সংগ্রহ করা যেতে পারে। এমনকি, এখানকার ‘পনির গ্রোটো’ (cheese grotto) -তে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ রয়েছে, যেখানে মাটির নিচে প্রায় ৩,০০০-এর বেশি পনিরের চাকতি সংরক্ষণ করা হয়।
গস্টাডে কেনাকাটারও চমৎকার সুযোগ রয়েছে। এখানকার পথ ধরে হেঁটে গেলে নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকান চোখে পড়ে, যেখানে পোশাক, গহনা এবং অন্যান্য বিলাসবহুল সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়াও, স্থানীয় কারুশিল্পের দোকানগুলোতে সুইস সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়।
গস্টাডে ভ্রমণের সেরা সময় হলো গ্রীষ্মকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এবং শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)। গ্রীষ্মকালে এখানকার মনোরম আবহাওয়া হাইকিং এবং বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত।
শীতকালে স্কিইং ও শীতকালীন বিভিন্ন খেলার আনন্দ উপভোগ করা যায়। নভেম্বরের আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূল থাকতে পারে, তাই এই সময়টা ভ্রমণের জন্য তেমন উপযুক্ত নয়।
বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরা জুরিখ অথবা জেনেভা বিমানবন্দরে অবতরণ করে সহজে গস্টাডে যেতে পারেন। এখানকার ট্রেন ব্যবস্থা খুবই উন্নত, যা ভ্রমণকে আরও সহজ করে তোলে।
গস্টাডের আশেপাশে ঘোরার জন্য স্থানীয় ‘গস্টাড কার্ড’ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা এখানকার গণপরিবহন ব্যবহারের সুযোগ দেয়।
গস্টাড, প্রকৃতির কোলে আধুনিক জীবনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন এবং একই সঙ্গে বিলাসবহুল জীবন উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য গস্টাড একটি আদর্শ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার