ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্ক বর্তমানে বেশ কঠিন পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে।
গত সপ্তাহে ওভাল অফিসে দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়, যা ইউক্রেন-মার্কিন সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
এই ঘটনার পর ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে জেলেনস্কির উপর, যিনি কিভাবে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে পারেন, তার ওপর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার সমর্থন কমে যেতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে, জেলেনস্কির জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আগের মতো সমর্থন আদায় করা।
যদিও এমনও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, কোনো কোনো মার্কিন কর্মকর্তা জেলেনস্কির পদত্যাগও চাইছেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ট্রাম্প ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সাহায্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন।
এরই মধ্যে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
ইউক্রেন পরিস্থিতি এখন এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ইউরোপীয় মিত্রদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তবে, কিয়েভে নিযুক্ত পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করেন, শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সমর্থন অপরিহার্য।
এদিকে, ট্রাম্প আগামী মঙ্গলবার কংগ্রেসে ভাষণ দেবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওলেksandr Kraiev মনে করেন, ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপন করা।
যদিও কাজটি কঠিন হবে, তবুও অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে এটি সম্ভব।
জেলেনস্কি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্ক একটি মুহূর্তের বিষয় নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব।
তাই, তিনি এই সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী এবং নতুন সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জেলেনস্কিকে দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু ইউক্রেনের আইনপ্রণেতা ওলেksandr Merezhko মনে করেন, আমেরিকার গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্টের একচ্ছত্র ক্ষমতা নেই।
তাই কংগ্রেস, ভোটার, গণমাধ্যম এবং জনমত—সবার সঙ্গেই কাজ করতে হবে।
ইউক্রেন-মার্কিন সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের মধ্যে ইউরোপ এগিয়ে এসেছে।
তবে, ইউরোপীয় শক্তিগুলোর একটি যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা কার্যকর করতেও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন।
সামরিক বিশেষজ্ঞ বেন ব্যারি মনে করেন, এখনও সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি।
তবে, একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
তিনি আরও যোগ করেন, ইউরোপ যদি ইউক্রেনকে সরাসরি অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে, তবে তার জন্য অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হবে।
সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা তাদের আছে কিনা, সেটিও দেখার বিষয়।
বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও জেলেনস্কি ইউক্রেনের নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন।
তিনি স্পষ্ট করেছেন, দেশের মানুষই ঠিক করবে কে তাদের নেতৃত্ব দেবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস