মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর রাশিয়াকে লক্ষ্য করে সাইবার আক্রমণের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। পেন্টাগনের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সাইবার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে, এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব পেটে হেগসেথ এই নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, সিআইএ (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক অন্যান্য সংস্থাগুলোর সাইবার কার্যক্রমের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। জানা গেছে, দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইসহ (ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) বিভিন্ন সংস্থায় ডিজিটাল ও সাইবার হুমকি মোকাবিলার জন্য আগে নেওয়া কিছু পদক্ষেপও বাতিল করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, নির্বাচন এবং নিরাপত্তার ওপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে সাইবার নিরাপত্তা এবং আক্রমণের ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞও এমনটাই মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র পরিচালক জন র্যাটক্লিফ সিনেটে শুনানিতে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষরা সাইবার গুপ্তচরবৃত্তিকে আধুনিক অস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। তিনি আরও বলেন, “আমি চাই, সাইবার জগতে আমাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের হাতিয়ার আমাদের হাতে থাকুক।”
পেন্টাগনের সাইবার কমান্ড (Cyber Command) এই বিষয়ক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করে থাকে। সাইবার জগৎে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ব্যবহারের জন্য আক্রমণাত্মক সাইবার পরিকল্পনাও করে থাকে এই কমান্ড।
প্রতিরক্ষা সচিবের এই নির্দেশ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ওভাল অফিসে বৈঠক করেছেন। তবে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়াকে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আসার জন্য কোনো আলোচনা কৌশল জড়িত আছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সাইবার যুদ্ধ প্রচলিত সামরিক শক্তির চেয়ে অনেক সস্তা। এছাড়া, এটি গোপনে পরিচালনা করা যায় এবং এতে প্রতিশোধের ঝুঁকিও কম থাকে। তাই, যেসব দেশের যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিহত করার মতো অর্থনৈতিক বা সামরিক শক্তি নেই, তাদের কাছে এটি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সানফ্রান্সিসকো ভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা horizon3.ai-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহল আন্তানি জানান, সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি ব্যবহার করে প্রতিপক্ষরা আমেরিকান কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রতিযোগিতামূলক গোপন তথ্য চুরি করতে পারে। এছাড়াও, গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বা বাঁধ, জল সরবরাহ কেন্দ্র, ট্র্যাফিক ব্যবস্থা, বেসরকারি কোম্পানি, সরকার ও হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে।
বর্তমানে রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো তাদের প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে অপপ্রচার ও ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial intelligence) এখন রাশিয়া, চীন বা উত্তর কোরিয়ার মতো বিদেশি রাষ্ট্র অথবা অপরাধ চক্রগুলোর জন্য সাইবার জগতের কার্যক্রম চালানো আগের চেয়ে অনেক সহজ ও সস্তা করে তুলেছে। কোড ঠিক করা, ভুয়া তথ্য অনুবাদ করা বা নেটওয়ার্কের দুর্বলতা খুঁজে বের করার মতো কাজ আগে মানুষ করত। এখন এআই অনেক দ্রুত সেই কাজগুলো করতে পারে।
এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বিদেশি প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে চালানো প্রচারণা বিষয়ক একটি এফবিআই টাস্কফোর্স ভেঙে দিয়েছেন। এছাড়া, সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামো নিরাপত্তা সংস্থায় (Cybersecurity and Infrastructure Security Agency) কর্মরত এক ডজনের বেশি কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
ইস্যু ওয়ান নামক একটি অলাভজনক সংস্থার প্রযুক্তি সংস্কার বিষয়ক প্রচারণা ব্যবস্থাপক লিয়ানা কিসিং-এর মতে, রাশিয়া সাইবার হামলা অব্যাহত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ, এমন প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, “এই হুমকির মোকাবিলা করার পরিবর্তে, ট্রাম্প প্রশাসন ক্রেমলিনকে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে আরও বেশি সুযোগ করে দিচ্ছে।”
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস