মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে পরিবর্তনের আভাস, ট্রাম্পের নীতিমালার প্রভাব কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া বিভিন্ন নীতি, যেমন শুল্ক বৃদ্ধি, অভিবাসন নীতি এবং সরকারি ব্যয় হ্রাসের মতো বিষয়গুলো দেশটির অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, শ্রমবাজারের এই পরিবর্তনে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান কমেছে। সাধারণত এমনটা দেখা যায় না। বেসরকারি সংস্থা ADP-এর তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে প্রায় ৩৩ হাজার কর্মসংস্থান কমেছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন, এই সময়ে ১ লাখ ১৫ হাজারের মতো নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এক ধরনের দ্বিধা। নতুন কর্মী নিতে চাইছেন না অনেকে, আবার কর্মীদের চাকরি ছাড়তে উৎসাহিতও করা হচ্ছে না। ADP-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ নেলা রিচার্ডসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “যদিও ছাঁটাই এখনো বিরল, কর্মী নিয়োগে অনীহা এবং কর্মীদের replacement-এর (বদলি) ক্ষেত্রে আগ্রহের অভাবের কারণে গত মাসে কর্মসংস্থান কমেছে।”
তবে ADP-এর হিসাব সব সময় সরকারি হিসাবের সঙ্গে হুবহু মেলে না। যেমন, ২০২৩ সালের মার্চ মাসের হিসাবে ADP দেখিয়েছিল ৫৩ হাজার কর্মীর চাকরি কমেছে, যেখানে সরকারি হিসাবে দেখা যায়, প্রায় ৮৫ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যাটা বেড়েছিল রাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলোতে ৩০ হাজার কর্মী নিয়োগের কারণে।
সাধারণত, ADP-এর দেওয়া তথ্য সামগ্রিক নিয়োগ এবং মজুরি বৃদ্ধির প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। অর্থনীতির এই দিকটি বিচার করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সালের মার্চ মাস ছিল বেশ কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির মাস, যখন কর্মসংস্থান কমে গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার শ্রম দপ্তর থেকে প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনে দেখা যেতে পারে, জুন মাসে ১ লাখ ১৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যদিও মে মাসে এই সংখ্যাটা ছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার। একই সঙ্গে, বেকারত্বের হার সামান্য বেড়ে ৪.৩ শতাংশে পৌঁছতে পারে, যা ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের পর সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ADP-এর এই হিসাব আসন্ন সরকারি হিসাবের জন্য একটি পূর্বাভাস হতে পারে। কিছু অর্থনীতিবিদ অবশ্য মনে করছেন, বৃহস্পতিবারের সরকারি রিপোর্টে বেসরকারি খাতে ১ লাখ নতুন চাকরির হিসাব আসতে পারে।
প্যান্থিওন ম্যাক্রোইকোনমিক্সের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ADP-এর এই হিসাব “বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়”, কারণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ৫২ হাজার কর্মীর চাকরি কমেছে, যেখানে গত ছয় মাসে এই দুটি খাতে গড়ে ৭৭ হাজার করে কর্মী যোগ হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা, সেই বিষয়েও আলোচনা চলছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বেড়ে ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় বেশি।
নীতি পরিবর্তনের প্রভাব : সাধারণত, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিফলন সংখ্যায় আসতে সময় লাগে। তবে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, কর্মী নিয়োগের গতি কমে আসছে। লাইটকাস্টের সিনিয়র লেবার ইকোনমিস্ট রন হেট্রিক সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “অর্থনীতিবিদ, বাজার এবং ব্যবসায়ীরা ফেডারেল রিজার্ভ থেকে সুদের হার কমানোর আশা করেছিলেন, যা অর্থনীতির উন্নতিতে সহায়তা করত।”
হেট্রিক আরও বলেন, “গত বছরের শেষের দিকে আমরা কিছু উৎসাহ দেখতে পাচ্ছিলাম। যখন অনিশ্চয়তা বাড়ল, শুল্কের বিষয়টি এলো, তখন ফেডারেল রিজার্ভ হার পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক হয়ে যায় এবং এই সমস্ত পরিকল্পনা হঠাৎ করেই বাতিল হয়ে যায়। এখন কোম্পানিগুলো ভালো অনুভব করছে না বলেই মনে হচ্ছে।”
তবে এই দুর্বলতা শ্রমবাজারকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন নার্ডওয়ালেটের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ এলিজাবেথ রেন্টার। তিনি বলেন, “শুল্ক, ফেডারেল কাট এবং অভিবাসন নীতির সম্পূর্ণ প্রভাব শ্রমবাজারে আসতে মাস বা বছর লেগে যেতে পারে। যদি দুর্বলতা চলতেই থাকে, তবে এর প্রভাব আরও বেশি হতে পারে, কারণ শ্রমবাজার কোনো ঝড়ের মোকাবিলা করার মতো শক্তিশালী থাকবে না।”
বেকারত্বের হারের জটিলতা : শ্রমবাজারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক হলো বেকারত্বের হার। অভিবাসন সংক্রান্ত কিছু পরিবর্তনের কারণে এই হার এখন হিসাবের একটি জটিল অংশে পরিণত হয়েছে। ওয়েলস ফার্গোর অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শ্রমশক্তির যে বৃদ্ধি হয়েছে, তার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই এসেছে বিদেশি শ্রমিকদের মাধ্যমে। অভিবাসন কমানোর সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা শ্রমশক্তির আকারকে সংকুচিত করছে।
বর্তমানে, কর্মী ছাঁটাইয়ের হার তেমন বাড়ছে না। তবে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় কিছুটা ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন