ইউরো ২০২৫: মাঠের লড়াইয়ে মুখোমুখি ফুটবল-প্রেমী যুগল, ডেনমার্ক-সুইডেন ম্যাচে আকর্ষণ
খেলাধুলায় ভালোবাসার গল্প অনেক শোনা যায়, কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়া—এমন ঘটনা সত্যিই বিরল। আসন্ন ইউরো ২০২৫ বাছাইপর্বে তেমনই এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছে ফুটবল বিশ্ব।
ডেনমার্ক ও সুইডেনের মধ্যকার ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন সুইডেনের ডিফেন্ডার ম্যাগডালেনা এরিকসন এবং ডেনমার্কের অধিনায়ক পারনিলে হার্ডার।
মাঠের খেলায় তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়বেন, কিন্তু মাঠের বাইরে তারা ভালোবাসার বাঁধনে আবদ্ধ, এক দশকের বেশি সময় ধরে তারা একসঙ্গে পথ চলছেন।
এই দুই তারকার সম্পর্কের শুরুটা ২০১৪ সালে, যখন তারা সুইডিশ ক্লাব লিংকোপিংয়ে একসঙ্গে খেলতেন।
এরপর চেলসি এবং বর্তমানে বায়ার্ন মিউনিখেও তারা একসঙ্গে খেলেছেন।
মাঠের বাইরের এই গভীর সম্পর্কের প্রভাব তাদের খেলার মাঠেও দেখা যায়।
২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে এরিকসনের চেলসিকে হারিয়েছিলেন হার্ডার, যেখানে হার্ডার গোলও করেছিলেন।
আবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে সুইডেন জয়লাভ করে।
তাদের সম্পর্কের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্তটি এসেছিল ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে।
ফ্রান্সের মাটিতে অনুষ্ঠিত সেই আসরে সুইডেন-কানাডা ম্যাচের পর তাদের চুম্বনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এরপর থেকেই তারা ক্রীড়াঙ্গনের এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
তাদের এই পরিচিতি সম্পর্কে এরিকসন একবার বলেছিলেন, “আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমরা আসলে অনেক মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা।”
হার্ডারও একই সুরে বলেছিলেন, “এই ছবি প্রকাশের পরই আমি উপলব্ধি করি, আমরা কত মানুষের কাছে অনুকরণীয়।”
মাঠের বাইরের এই সম্পর্কের মতোই তাদের মাঠের লড়াইও বেশ উপভোগ্য।
সম্প্রতি, নেশনস লিগের একটি ম্যাচে এরিকসনকে ফাউল করার কারণে হার্ডারের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
সেই ম্যাচে এরিকসনের দল জয়লাভ করে।
সেই ম্যাচে হার্ডারকে রুখতে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন এরিকসন।
তাদের এই লড়াইয়ের কারণে অনেক সময় হাসি-ঠাট্টারও জন্ম হয়।
এই যেমন, খেলা শেষে কে ঘরোয়া কাজ করবে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে চলে মজাদার প্রতিযোগিতা।
ফুটবলের বাইরেও, এই জুটি সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন।
তারা ‘কমন গোল’ নামক একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের ‘প্লে প্রাউড’ প্রকল্পে সহায়তা করেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা খেলাধুলার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন।
তারা তাদের উপার্জনের ১ শতাংশ এই সংস্থায় দান করেন।
আসন্ন ইউরো ২০২৫ বাছাইপর্বের ম্যাচে তাদের লড়াই দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
মাঠের খেলায় তারা পরস্পরের প্রতিপক্ষ হলেও, মাঠের বাইরে তাদের অটুট ভালোবাসাই তাদের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস