যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ব্রডওয়ে সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘হ্যামিল্টন’ ২০২৬ সালে কেনেডি সেন্টারে তাদের পরিবেশনা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের ফলে কেনেডি সেন্টারের সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তন এসেছে, তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে তারা রাজি নয়। খবরটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
‘হ্যামিল্টন’-এর প্রযোজক জেফরি সেলার এক বিবৃতিতে জানান, “আমরা কোনোভাবেই কেনেডি সেন্টারে চাপানো নতুন সংস্কৃতির অংশ হতে পারি না।”
২০১৬ সালে প্রথমবার ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ হওয়া ‘হ্যামিল্টন’ সঙ্গীতানুষ্ঠানটি আমেরিকার প্রথম অর্থমন্ত্রী আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের জীবন নিয়ে তৈরি।
এর রচয়িতা হলেন লিন-ম্যানুয়েল মিরান্ডা।
এটি সেরা নতুন সঙ্গীতানুষ্ঠান বিভাগে টনি অ্যাওয়ার্ড, পুলিৎজার পুরস্কার, গ্র্যামি এবং এডওয়ার্ড এম কেনেডি প্রাইজ ফর ড্রামা’র মতো সম্মানজনক পুরস্কার জিতেছে।
এছাড়া, মিরান্ডা একটি ম্যাক আর্থার ফাউন্ডেশন ‘জিনিয়াস’ অনুদানও লাভ করেছেন।
এর আগে, ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে এবং ২০২২ সালে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ‘হ্যামিল্টন’ কেনেডি সেন্টারে পরিবেশনা করেছিল।
২০২৬ সালের ৩রা মার্চ থেকে ২৬শে এপ্রিল পর্যন্ত এখানে তাদের আবার পারফর্ম করার কথা ছিল।
কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তের ফলে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।
টিকিট বিক্রি এখনো শুরু হয়নি।
জেফরি সেলার আরও বলেন, “আমরা সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কাজ করছি না, বরং তার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের ফলে কেনেডি সেন্টারে যে দলীয় নীতি চাপানো হচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কেনেডি সেন্টার একটি জাতীয় সম্পদ এবং এই ধরনের পদক্ষেপ সেখানে নতুন করে বিভেদ তৈরি করবে।”
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেনেডি সেন্টারের পরিচালনা পর্ষদের প্রধানদের সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই এই কেন্দ্রে অস্থিরতা চলছে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ‘ওয়েক’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তার বৃহত্তর প্রচারণার অংশ ছিল।
শুধু ‘হ্যামিল্টন’ই নয়, অভিনেত্রী ইসা রাই, সঙ্গীতশিল্পী রিহানন গিডেন্স, লেখক লুইস পেনি এবং রক ব্যান্ড লো কাট কনিও তাদের পূর্বনির্ধারিত কেনেডি সেন্টার-এর অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন।
সঙ্গীতশিল্পী ভিক্টোরিয়া ক্লার্ক অবশ্য ১৫ই ফেব্রুয়ারির শো করেছেন, তবে মঞ্চে তিনি ‘অ্যান্টি ট্রাম্প এএফ’ লেখা একটি টি-শার্ট পরে ছিলেন।
রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘হ্যামিল্টন’-এর এটি প্রথম ঘটনা নয়।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট মাইক পেন্স ব্রডওয়ের দর্শক সারিতে ছিলেন।
তখন ‘হ্যামিল্টন’-এর কলাকুশলীরা মঞ্চ থেকে তাকে আমেরিকার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার এবং সবার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, কেনেডি সেন্টার সরকারি অর্থ এবং ব্যক্তিগত অনুদানে পরিচালিত হয়।
এখানে কনসার্ট হল, অপেরা হাউস, থিয়েটার, বক্তৃতা কক্ষ, মিটিং স্পেস এবং বিনামূল্যে অনুষ্ঠানের জন্য ‘মিলেনিয়াম স্টেজ’ রয়েছে।
প্রতি বছর এই কেন্দ্রে লক্ষ লক্ষ দর্শকের সমাগম হয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস