যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে শুধু আমেরিকাই নয়, বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে দেখা দিতে পারে বিপর্যয়।
চিকিৎসা গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে অর্থ বরাদ্দ কমালে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের গবেষণা ব্যাহত হবে, যা উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করবে অনেক মানুষকে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ), যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তাদের বাজেট কাটছাঁটের সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে।
এর পাশাপাশি নতুন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের গবেষণাগুলোও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ক্যান্সার, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, স্নায়ু রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারে বিলম্ব হতে পারে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমালে গ্রামীণ অঞ্চলের রোগীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, সেখানকার গ্রামীণ অঞ্চলের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার সুযোগ কম।
অনেক রোগীকে চিকিৎসার জন্য দূরের শহরগুলোতে যেতে হয়।
এনআইএইচের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হলে এই রোগীদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা খাতে এনআইএইচের বাজেট প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
এই বিশাল অর্থের একটি অংশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ব্যয় করা হয়।
এছাড়াও, গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, বিদ্যুতের বিল, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, নিরাপত্তা এবং নীতিগত বিষয়গুলোর তদারকির মতো ‘পরোক্ষ খরচ’-এরও প্রয়োজন হয়।
প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁটের ফলে এই ‘পরোক্ষ খরচ’-এর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে, যা গবেষণা কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য।
গবেষণা সংস্থা ইউনাইটেড ফর মেডিক্যাল রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, এনআইএইচের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রম বর্তমানে ৪ লক্ষ ১২ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে এবং প্রায় ৯২ বিলিয়ন ডলারের নতুন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে।
যদি প্রস্তাবিত হারে বাজেট কমানো হয়, তবে শুধু এই কারণে প্রায় ৫৮ হাজার মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভবনা রয়েছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট রিচার্ড হুগানির মতে, গবেষণা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে স্থানীয় অর্থনীতিতে এবং চিকিৎসা সেবার ওপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমানোর সিদ্ধান্ত দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানকে পিছিয়ে দেবে।
এর ফলে, নতুন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে উদ্ভাবন কমে যাবে, যা রোগীদের জন্য জীবনহানির কারণ হতে পারে।
এছাড়াও, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা, যেমন ট্রান্সজেন্ডার স্বাস্থ্য বা স্তন ক্যান্সারের কারণ অনুসন্ধান-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমানোর এই সিদ্ধান্তের ফলে উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও স্বাস্থ্যখাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
কারণ, উন্নত বিশ্বে উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও গবেষণা কার্যক্রম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পরে এবং তা বিভিন্ন দেশের রোগীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী ভূমিকা পালন করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস