মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ ভেঙ্গে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির শিক্ষাখাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের নতুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে লিন্ডা ম্যাকমোহনকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে। দায়িত্ব পেলে ম্যাকমোহন সম্ভবত শিক্ষা বিভাগকে গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ঋণ প্রদান, শিক্ষার অধিকার বিষয়ক বিষয়গুলো দেখাশোনা করা, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া এবং স্কুলগুলোতে ফেডারেল তহবিল বিতরণ করা। এই বিভাগ বন্ধ করে দিলে, এসব কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থাকে নিতে হবে।
শিক্ষা বিভাগের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো শিক্ষার্থীদের ঋণ দেওয়া। এই বিভাগ প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি শিক্ষার্থী ঋণের বিষয়টি দেখাশোনা করে, যা প্রায় ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থীর ওপর বর্তায়। এছাড়াও, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে পেলের অনুদান এবং ফেডারেল স্টুডেন্ট এইড প্রোগ্রাম (FAFSA) পরিচালনা করে থাকে এই বিভাগ। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যদিও সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়, তারপরও বাইডেন প্রশাসন বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রায় ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ মওকুফ করতে সক্ষম হয়।
শিক্ষা বিভাগ জাতিগত ও আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুযোগের অভাব এবং তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে শিক্ষা বিভাগের এই অফিসের কাজের ধরনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। তিনি এই অফিসের মাধ্যমে, বর্ণবাদের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিবর্তে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে, তিনি ট্রান্সজেন্ডার (transgender) শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করতে বলেন।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রেও শিক্ষা বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বিভাগ ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থাকে পর্যালোচনা করে থাকে। সাধারণত, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফেডারেল তহবিল পাওয়ার জন্য এই স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্প এমন কিছু ‘বামপন্থী’ অ্যাক্রেডিটরের সমালোচনা করেছেন এবং নতুন অ্যাক্রেডিটরের জন্য আবেদন করার কথা বলেছেন, যারা ‘মার্কসবাদী’ এবং ‘ঐতিহ্যবিরোধী’ বিষয়গুলো সমর্থন করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলগুলোতে শিক্ষা বিভাগের অর্থায়নের একটি বড় অংশ আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য টাইটেল ১ এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিষয়ক আইন (Individuals with Disabilities Education Act)। ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে এই কার্যক্রমগুলো রাজ্য সরকারের হাতে ন্যস্ত করার কথা বলেছিলেন। এছাড়াও, তিনি শিক্ষকতার মেয়াদ (teacher tenure) বাতিল করার এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে পছন্দের স্বাধীনতা চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন।
তবে, শিক্ষা বিভাগ ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়টি বেশ জটিল। কারণ, এটি বাস্তবায়ন করতে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এছাড়া, শিক্ষা বিভাগের কর্মীদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস