সীমান্তের উত্তেজনা সত্ত্বেও, পাকিস্তানের টেলিভিশন নাটকগুলো ভারতের দর্শকদের মন জয় করছে। দেশভাগের তিক্ততা সত্ত্বেও, প্রতিবেশী দেশের সংস্কৃতিকে জানার আগ্রহ বাড়ছে ভারতীয়দের মধ্যে, আর এই কাজটি করছে পাকিস্তানের জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালগুলো।
পাকিস্তানের নাটকগুলো এখন আর শুধু তাদের দেশের দর্শকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। পারিবারিক গল্প, সম্পর্কের টানাপোড়েন, সমাজের প্রতিচ্ছবি – এইসব বিষয়গুলো খুবই স্বাভাবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় এই নাটকগুলোতে। এর ফলেই ভারতীয়রা সহজেই তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। ইউটিউব, জি ফাইভ (ZEE5), এবং এমএক্স প্লেয়ারের (MX Player) মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে সহজেই এই নাটকগুলো দেখা যায়।
ইসলামাবাদের ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক মাহীন শफीক বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরকারের সম্পর্ক কার্যত নেই বললেই চলে। কাশ্মীর এবং সন্ত্রাসবাদ – এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
তবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিভেদ অনেকটাই কম। ভারতীয় লেখিকা কাভেরি শর্মা জানান, ছোটবেলায় তিনি শুনেছিলেন পাকিস্তান ভারতের শত্রু, যারা সবকিছু কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু, পাকিস্তানের নাটকগুলো দেখার পর তার ধারণা বদলে গেছে। তিনি বলেন, “নাটকগুলো খুব পরিচিত লাগে, যেন আমাদের জীবনেরই গল্প। করাচিকে আমার লখনউ বা পাটনার মতো মনে হয়।”
শুধু কাভেরি নন, হায়দ্রাবাদের বিবি হাফিজ এবং রায়পুরের পুনিতা কুমার-এর মতো আরও অনেকে এই নাটকগুলোর বিষয়বস্তু, চরিত্র এবং অনুভূতির গভীরতার প্রশংসা করেন। “পাকিস্তানি চরিত্রগুলো কেবল ভালো অথবা খারাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাদের মধ্যে মানবিক দিকগুলোও থাকে,” বলেন পুনিতা।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ও প্রযোজক খালিদ আনাম মনে করেন, ভারতের দর্শকদের এই আগ্রহ দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের কাছে নাটক যা, ভারতের কাছে বলিউডও তাই।”
পাকিস্তানে বছরে প্রায় ৮০ থেকে ১২০টি নাটক তৈরি হয়। সেখানকার নির্মাতারা তাঁদের নাটকে সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলেন। অন্যদিকে, ভারতীয় সিরিয়ালগুলোতে থাকে জৌলুস এবং অতি নাটকীয়তা। পাকিস্তানের নাটকগুলোতে গল্পের গভীরতা থাকে, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে।
পাকিস্তানের পরিচালক সাইফ হাসান জানান, ভারতীয়রা তাঁর সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই তাঁদের ভালো লাগার কথা জানান। এমনকি, তিনি একবার দেখেছেন, একটি নাটকের অভিনেতা কোমায় চলে গেলে, ভারতীয় দর্শকরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করেছেন। তিনি চান, আরও বেশি পাকিস্তানি নাটক নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফর্মে আসুক।
সাইফ হাসানের মতে, “পশ্চিমের মানুষের থেকে আমাদের চিন্তা-ভাবনার ধরন আলাদা। আমাদের নাটকগুলো ঘটনার চেয়ে অনুভূতির ওপর বেশি নির্ভরশীল।” এছাড়াও, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং শালীনতা বজায় রাখার কারণেও এই নাটকগুলো ভারতীয় দর্শকদের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেকার এই সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, দুই দেশের মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।