ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে এবং ইউক্রেনকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সমর্থন হ্রাসের আশঙ্কার মধ্যে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য নীতির কারণে এমন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
বৈঠকে জার্মানির ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর হিসেবে পরিচিত ফ্রিডরিশ মেরজ এবং শীর্ষ বৈঠকের চেয়ারম্যান আন্তোনিও কস্তার মধ্যে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হয়। মেরজ জার্মানিতে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের জন্য ঋণ গ্রহণের নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব করেন।
অন্যদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে রাশিয়ার হুমকি থেকে মহাদেশকে রক্ষার জন্য ফ্রান্সের পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন।
বৈঠকে ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধের জন্য অর্থ ব্যয় করতে হবে। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্মেলনে যোগ দেন এবং ইইউ নেতাদের কাছ থেকে জোরালো সমর্থন পান। তিনি বলেন, “আমি সকল ইউরোপীয় নেতাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। যুদ্ধের শুরু থেকে, এই পুরো সময় ধরে এবং গত সপ্তাহে আপনারা আমাদের পাশে ছিলেন।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন der লেয়েন বাজেট সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব করেছেন, যাতে সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারে। এই প্রস্তাবের অংশ হিসেবে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৫০ বিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ লক্ষ কোটি টাকা, প্রতি ইউরোর বিনিময় হার ১২০ টাকা ধরে) ঋণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ফ্রান্স বর্তমানে তাদের বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটির মোট ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১১২ শতাংশে পৌঁছেছে। ইইউর আরও পাঁচটি দেশের (বেলজিয়াম, গ্রিস, স্পেন, ইতালি ও পর্তুগাল) ঋণের পরিমাণও জিডিপির ১০০ শতাংশের বেশি। জার্মানির ঋণ জিডিপির ৬২ শতাংশ।
তবে সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে ইউক্রেনের জরুরি সামরিক চাহিদা তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ কিংবা রাশিয়ার জব্দকৃত প্রায় ১৮৩ বিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ লক্ষ কোটি টাকা) সম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নৌসেদা বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা না হলে ইতিহাস আমাদের শাস্তি দেবে।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তাঁর নিজের শহর ক্রিভি রিহ-এ একটি হোটেলে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতের ঘটনা তুলে ধরেন।
আলোচনায় ঐকমত্যের অভাবও দেখা গেছে। হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে ভেটো দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আগামী ২০-২১ মার্চে ইইউর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস