ফিলিস্তিনের গাজায় জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিকে উড়িয়ে দিল হামাস। সংগঠনটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হলেই কেবল তারা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে।
খবর অনুযায়ী, হামাস জানিয়েছে, তাদের এই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হবে না।
বৃহস্পতিবার (গতকাল) হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানুয়া জানিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তির সেরা উপায় হলো, আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তিতে আসা।
জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এখনো শুরু হয়নি।
এই ধাপে জিম্মিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অন্যদিকে, বুধবার (গতকাল) আটজন সাবেক জিম্মির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প হামাসকে ‘শেষ হুঁশিয়ারি’ দেন।
হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে, তারা হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছে, যদিও ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “অবিলম্বে জিম্মিদের মুক্তি দিন, মৃতদেহগুলো ফেরত দিন।
তা না হলে তোমাদের জন্য পরিণতি খারাপ হবে।
অসুস্থ ও বিকৃত মানসিকতার লোকরাই মৃতদেহ আটকে রাখে, আর তোমরা সে ধরনেরই।”
জানা গেছে, হামাসের হাতে এখনো প্রায় ২৪ জন জীবিত জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি-মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন।
এছাড়া, হামাস আরও ৩৪ জনের মৃতদেহ আটকে রেখেছে, যাদের মধ্যে ৭ অক্টোবরের হামলায় নিহত হওয়া এবং বন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
২০১৪ সালের যুদ্ধে নিহত এক সেনার দেহও তাদের কাছে রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ৪২ দিনের সময়কালে হামাস প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে ২৫ জন ইসরায়েলি জিম্মি ও আটজনের মরদেহ মুক্তি দেয়।
ইসরায়েল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নতুন পরিকল্পনার পক্ষে মত দিয়েছে।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস অবিলম্বে অবশিষ্ট জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি দেবে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আলোচনার পর বাকিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
তবে হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানায়, তারা জানুয়ারির চুক্তিতেই অটল থাকবে।
এদিকে, হামাসকে নতুন প্রস্তাব গ্রহণে বাধ্য করতে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দিলে তারা ‘আরও কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও হামাসের মধ্যে হওয়া আলোচনা থেকে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, বিদেশি সাহায্য কমানোর কারণে মানবিক কর্মীদের জীবন বাঁচানোর কাজে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
তিনি জানান, বিভিন্ন দেশে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, মিশরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিতব্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গাজার পুনর্গঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মিশরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘের সহযোগিতায় এই সম্মেলনে একটি পাঁচ বছর মেয়াদি ৫৩ বিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা পেশ করা হবে।
মিশরের কর্মকর্তারা জানান, তারা বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে গিয়ে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৮,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস