পশ্চিম তীর, ফিলিস্তিন: রমজান মাসে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি দাতব্য রান্নাঘর। ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া ৪০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিকের জন্য খাবার সরবরাহ করছে এই ‘ইয়াসির আরাফাত চ্যারিটি কিচেন’।
সম্প্রতি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চালানো হয়। এর ফলে সেখানকার অনেক ফিলিস্তিনি নাগরিক তাদের ঘরবাড়ি হারাতে বাধ্য হয়েছেন। উদ্বাস্তু হওয়া এই মানুষগুলোর জীবনে রমজান মাসের পবিত্রতা যেন এক গভীর কষ্ট নিয়ে এসেছে। সাধারণত রমজান মাসে সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করেন। কিন্তু ঘরবাড়ি, আপনজন এবং সেই স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে এখন সেই সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে, তুলকারেম শহরের একটি অফিস ভবনের ভেতরে এই অস্থায়ী রান্নাঘরটি তাদের জন্য ত্রাতার ভূমিকা পালন করছে। এখানে স্বেচ্ছাসেবকরা চিকেন, সবজি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ জনের খাবারের ব্যবস্থা করছেন।
এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তুলকারেম এলাকার গভর্নর আব্দুল্লাহ কামিল জানান, “পরিস্থিতি খুবই কঠিন। এই কঠিন সময়ে আমরা চেষ্টা করছি মানুষের পাশে থাকতে। বিশেষ করে রমজান মাসে তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে আমরা এই দাতব্য রান্নাঘরের মাধ্যমে সাহায্য করছি।”
বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের মধ্যে ৬০ বছর বয়সী মনসুর আউফা অন্যতম। ফেব্রুয়ারির শুরুতে তিনি তুলকারেম শরণার্থী শিবির থেকে বিতাড়িত হন। তিনি জানেন না কবে আবার নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। আউফা বলেন, “এই বাড়িটা আমার জন্মভূমি, যেখানে আমি বড় হয়েছি, জীবন কাটিয়েছি। এখন সেখানে আমার প্রবেশাধিকার নেই।” তিনি আরও জানান, তার স্ত্রী এবং চার সন্তান এখন এক আত্মীয়ের শহরে অবস্থিত একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন, যেখানে তারা মেঝেতে পাতলা তোষকের উপর ঘুমান। তিনি বলেন, “কোথায় যাব? যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। তবে আল্লাহর রহমতে আমরা কিছু মানুষের কাছ থেকে খাবার ও অন্যান্য সাহায্য পাচ্ছি।”
রমজান মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে সবাই আল্লাহর প্রতি নিজেদের সমর্পণ করে থাকেন। অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্য করা এই মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ‘ইয়াসির আরাফাত চ্যারিটি কিচেন’-এর এই উদ্যোগ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি আশার আলো।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস