স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য রান্নার তেলে পরিবর্তন: বাটার নাকি উদ্ভিজ্জ তেল, কোনটি বেশি উপকারী?
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে খাদ্য এবং পুষ্টি বিষয়ক আলোচনা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এক গবেষণায় বাটারের পরিবর্তে কিছু নির্দিষ্ট উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। হার্ভার্ড টি. এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এবং ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেন’স হাসপাতালের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই গবেষণাটি ‘জামা ইন্টারনাল মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বাটারের অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অন্যদিকে, সয়াবিন, ক্যানোলা এবং জলপাইয়ের মতো উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করলে মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। গবেষণাটি প্রায় তেত্রিশ বছর ধরে ২ লক্ষ ২১ হাজারের বেশি মানুষের খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের ডায়েটের তথ্য প্রতি চার বছর অন্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। বয়স, বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই), ধূমপানের অভ্যাস এবং ক্যালোরি গ্রহণের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি পরিমাণে বাটার গ্রহণ করেছেন, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ছিল। এর বিপরীতে, যারা উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১৬ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ১০ গ্রাম বাটারের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করলে সামগ্রিক মৃত্যুহার এবং ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যুঝুঁকি ১৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
তাহলে, রান্নার জন্য কোন তেল ব্যবহার করা ভালো?
গবেষকরা বলছেন, উদ্ভিজ্জ তেলগুলোর মধ্যে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। সয়াবিন এবং ক্যানোলা তেলে এই দুটি উপাদানই পাওয়া যায়। জলপাই তেলও স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে, ভুট্টা এবং সূর্যমুখী তেলে ওমেগা-৩ এর পরিমাণ কম থাকে। তাই রান্নার জন্য তেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।
আমাদের দেশে রান্নার ক্ষেত্রে সর্ষের তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল এবং পাম তেল-এর ব্যবহারও বেশ প্রচলিত। এই তেলগুলোও উদ্ভিজ্জ তেলের ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে, যেকোনো ধরনের তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ রাখা জরুরি। অতিরিক্ত তেল ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বাটার এবং ঘি-এর ভূমিকা:
বাটার এবং ঘি, উভয়ই ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার। বাটারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ‘সম্পৃক্ত চর্বি’র পরিমাণ বেশি থাকে। অন্যদিকে, উদ্ভিজ্জ তেলগুলোতে অসম্পৃক্ত চর্বি বিদ্যমান, যা স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। যেহেতু আমাদের দেশে ঘি-এর ব্যবহার বেশ প্রচলিত, তাই রান্নার ক্ষেত্রে ঘি-এর পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহারের কথা ভাবা যেতে পারে। তবে, মাঝে মাঝে খাবারের স্বাদ পরিবর্তনে ঘি ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপসংহার:
গবেষণায় উদ্ভিজ্জ তেলের উপকারিতা প্রমাণিত হলেও, খাদ্যতালিকা থেকে বাটারকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য রান্নার ক্ষেত্রে বাটারের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করা একটি ভালো পদক্ষেপ হতে পারে। খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন