হলিউডে এখন যেন দ্বৈত চরিত্রের এক মহা-উৎসব চলছে। একই অভিনেতা বা অভিনেত্রী, পর্দায় একাধিক রূপে, কখনও জমজ, কখনও প্রতিপক্ষ, আবার কখনও বা একেবারে ভিন্ন দুইটি সত্তা নিয়ে হাজির হচ্ছেন। রুপালি পর্দায় এই দ্বৈত চরিত্র রূপায়নের পেছনে রয়েছে কিছু আকর্ষণীয় কারণ, সেই সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারিশমা।
আগে, এই ধরনের দ্বৈত চরিত্র প্রায়ই হাসির খোরাক হিসেবে ব্যবহৃত হত। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাডাম স্যান্ডলারের ‘জ্যাক অ্যান্ড জিল’ কিংবা ‘ফ্রেন্ডস’-এ লিসা কুড্রোর অভিনয় স্মরণ করা যেতে পারে। তবে, এখনকার সিনেমাগুলোতে দ্বৈত চরিত্রগুলো আরও গভীর এবং নাটকীয়তা নিয়ে আসছে। রবার্ট ডি নিরোকে দেখা যাবে ‘দ্য আল্টো নাইটস’-এ দ্বৈত চরিত্রে, যেখানে তিনি একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও, মাইকেল বি জর্ডান ‘সিনার্স’ ছবিতে যমজ চরিত্রে অভিনয় করছেন, এবং রবার্ট প্যাটিনসনকে দেখা যাবে বং জুন-হোর ‘মিকি ১৭’ ছবিতে।
শুধু বড় পর্দাই নয়, ছোট পর্দাতেও এই প্রবণতা বাড়ছে। নেটফ্লিক্সের আসন্ন সিরিজ ‘দ্য আন্ডারটো’-তে দেখা যাবে যমজ চরিত্রে জেমি ডর্নানকে, এবং ‘ইউ’ সিরিজের শেষ সিজনে আনা ক্যাম্পকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা যাবে। এছাড়াও, ‘অ্যানানসি বয়েজ’-এ মালাচি কিরবি এবং ‘পকার ফেস’-এ সিনথিয়া এরিভো অভিনীত দ্বৈত চরিত্রগুলো দর্শকদের জন্য নতুন আকর্ষণ নিয়ে আসছে।
তাহলে, হঠাৎ করে কেন এই দ্বৈত চরিত্রের এত বাড়বাড়ন্ত? এর প্রধান কারণ হল চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রযুক্তির উন্নতি। ভিএফএক্স শিল্পী ড্যানিয়েল হ্যারিংটন-এর মতে, “আগে যেখানে একই দৃশ্যে অভিনেতাকে একাধিকবার দেখানোর জন্য বিশেষ কৌশল ব্যবহার করা হত, সেখানে এখন উন্নত প্রযুক্তির কারণে কাজটি অনেক সহজ হয়েছে।” উদাহরণস্বরূপ, ‘প্যারেন্ট ট্র্যাপ’-এ একই অভিনেতা/অভিনেত্রীকে একটি দৃশ্যে দুই দিকে দেখানোর জন্য ‘স্প্লিট স্ক্রিন’ ব্যবহার করা হত। আবার, ‘দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ ছবিতে ক্যামেরার বিশেষ মুভমেন্টের মাধ্যমে উইংকেলভস যমজদের ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।
প্রযুক্তির উন্নতির ফলে, এখন ‘ডিপফেক’ এবং ‘পারফরম্যান্স ক্লোনিং’-এর মতো অত্যাধুনিক কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দ্বৈত চরিত্র রূপায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, অভিনেতাদের মুখের আদল পরিবর্তন করা বা তাদের অভিনয়কে নকল করা সম্ভব হচ্ছে। যদিও এই প্রযুক্তি এখনো ত্রুটিমুক্ত নয়, তবে এর ব্যবহার দ্বৈত চরিত্রের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
তবে, দ্বৈত চরিত্রের সফল রূপায়নের জন্য শুধু প্রযুক্তিই যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন অভিনেতা এবং নির্মাতাদের মধ্যে সমন্বয়। সেটের প্রস্তুতি, সঠিক আলো এবং ক্যামেরার কাজ—এগুলোও দ্বৈত চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দ্বৈত চরিত্রের এই নতুন ধারায়, অভিনেতা এবং নির্মাতারা যেমন সৃজনশীলতার সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। পুরনো এবং নতুন প্রযুক্তির মিশ্রণে, দ্বৈত চরিত্রের ধারণা সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান