বিখ্যাত মার্কিন কবি এডউইন আর্লিংটন রবিনসন (১৮৬৯-১৯৩৫)-এর কবিতা, “ভেটেরান সাইরেনস” (Veteran Sirens), সময়ের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ের এক মর্মস্পর্শী চিত্র।
কবিতাটি এমন কিছু নারীর কথা বলে, যারা বার্ধক্যের বিরুদ্ধে, সময়ের নিষ্ঠুর থাবার বিরুদ্ধে নিজেদের সৌন্দর্য আর আবেদন ধরে রাখতে চেষ্টা করে চলেছেন।
রবিনসন এই নারীদের প্রতি গভীর সহানুভূতি দেখিয়েছেন, তাঁদের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন, যা একইসঙ্গে সৌন্দর্য, নশ্বরতা এবং সমাজের চোখে তাঁদের স্থান নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।
কবিতায়, রবিনসন সপ্তদশ শতাব্দীর ফরাসি বিদুষী নিনোঁ দ্য লঁক্লোর (Ninon de Lenclos) সঙ্গে এই নারীদের একটি তুলনা করেছেন।
নিনোঁ ছিলেন তাঁর সময়ের প্রভাবশালী একজন নারী, যিনি নিজের বুদ্ধিমত্তা এবং সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত ছিলেন।
এই তুলনার মাধ্যমে কবি দেখিয়েছেন, সময়ের নিয়মে সবাইকেই একদিন মৃত্যুর কাছে নতি স্বীকার করতে হয়, যেখানে সামাজিক মর্যাদা বা অতীতের খ্যাতি অর্থহীন হয়ে পড়ে।
“ভেটেরান সাইরেনস” কবিতাটি মূলত কয়েকজন বয়স্ক নারীর প্রতিকৃতি, সম্ভবত তাঁরা একসময় সমাজের চোখে “পতিতা” হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
রবিনসন তাঁদের ভেতরের সাহস আর জীবন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
তাঁরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন, তাঁদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চাইছেন, যদিও তাঁদের শরীরে বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট।
কবি তাঁদের এই লড়াইকে সম্মান জানিয়েছেন, তাঁদের মানবিক দুর্বলতাকে উপেক্ষা করেননি।
কবিতায় ব্যবহৃত ভাষা অত্যন্ত শক্তিশালী ও ইঙ্গিতপূর্ণ।
“পোড়া আশা”, “ক্লান্ত প্রতীক্ষা”, “ক্ষতিগ্রস্ত কৌতুক” এবং “আহত আকর্ষণ”-এর মতো শব্দগুলি যেন সময়ের বিরুদ্ধে তাঁদের আর্তনাদ।
রবিনসন এই শব্দগুলোর মাধ্যমে তাঁদের ভেতরের গভীর কষ্ট আর আকুলতাকে তুলে ধরেছেন।
অন্যদিকে, নিনোঁর উল্লেখের মাধ্যমে কবি দেখিয়েছেন, জীবনের মোহ একদিন ফুরিয়ে যায়, খ্যাতি বা প্রতিপত্তি সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
“ভেটেরান সাইরেনস”-এর নারীরা সমাজের চোখে হয়তো উপেক্ষিত, কিন্তু রবিনসন তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
তিনি তাঁদের সংগ্রামের গভীরতা অনুভব করেন, তাঁদের দুর্বলতাগুলোকেও সম্মান জানান।
এই কবিতায় কবি দেখিয়েছেন, জীবনের প্রতি মানুষের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং নশ্বরতা—এগুলো সব মানুষের সাধারণ অভিজ্ঞতা।
“ভেটেরান সাইরেনস” কবিতাটি রবিনসনের “দ্য ম্যান অ্যাগেইনস্ট দ্য স্কাই” (The Man Against the Sky) কাব্য সংকলনে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
এই কবিতা আজও সময়ের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা আমাদের জীবনের গভীরতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান