বিংশ শতাব্দীর ‘রোমান্টিক বিশ’ -এর ম্যানহাটন কেমন ছিল, তা যদি জানতে চান, তাহলে চলুন!
একশ বছর আগে, ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নিউ ইয়র্কের জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাত্রা বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে। সেই সময়ে ম্যানহাটনে তৈরি হয়েছিল ক্রাইসলার বিল্ডিংয়ের মতো আধুনিক স্থাপত্য, যা পরবর্তীতে ফ্যাশন ও জীবনযাত্রায় নতুন দিগন্তের সূচনা করে। জ্যাজ সঙ্গীতের উন্মাদনা, শ্যাম্পেনের স্রোত আর গোপন প্রেমের গল্পের সাক্ষী ছিল সেই সময়। এখনো, এক দিনের সফরে সেই সময়ের স্মৃতিচিহ্নগুলো অনুভব করা যেতে পারে।
সকালের শুরুটা হোক পুরনো দিনের একটি ডিনারে। ট্রাইবেকার ‘স্কয়ার ডিনার’-এ গেলে মনে হবে যেন ১৯২২ সালে ফিরে এসেছেন। ট্রেনের বগির মতো দেখতে এই ক্যাফেতে কাঠের প্যানেলযুক্ত দেওয়াল, পুরনো দিনের ছবি আর চামড়ার আসনে বসে প্রাতরাশের মজাদার মেনু উপভোগ করা যেতে পারে। গরম প্যানকেক, ডিম ও অন্যান্য মুখরোচক খাবার সেখানে পরিবেশন করা হয়।
এরপর চলুন রকফেলার সেন্টারে। মিডটাউনে অবস্থিত এই আর্ট ডেকো কমপ্লেক্সটি তৈরি হয়েছিল মহামন্দার সময়ে। এর ১৯টি অংশ ফিফথ ও সিক্সথ অ্যাভিনিউয়ের মধ্যে বিস্তৃত। এখান থেকে শহরের সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য টিকিট কাটতে হয়। তবে, যারা টিকিট কাটতে চান না, তারাও এখানকার লবিতে প্রবেশ করে সোনার কারুকার্যখচিত অভ্যন্তরীণ সজ্জা দেখতে পারেন।
দুপুরের খাবারের আগে ঘুরে আসুন ‘ডেজার্ট ভিনটেজ’-এ। লোয়ার ইস্ট সাইডে অবস্থিত এই বুটিকটিতে ১৯০০ থেকে ১৯৭০ সালের পোশাকের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। এখানে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাক, ঝলমলে গয়না এবং পুরনো দিনের আকর্ষণীয় পোশাক পাওয়া যায়। গ্যাটসবি-র পার্টিতে পরার মতো পোশাকের জন্য এই জায়গাটি দারুণ।
দুপুরের খাবার হোক পাম কোর্টে। একশো পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে, এই রেস্তোরাঁটি নিউ ইয়র্কের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পছন্দের জায়গা। ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’র লেখক এফ স্কট ফিটজেরাল্ড এবং ১৯৩০-এর দশকের অভিনেত্রী মার্লিন ডিয়েট্রিখ-এর মতো ব্যক্তিরা এখানে আসতেন। প্ল্যাজা হোটেলের মার্বেল পাথরের স্থাপত্যে ঘেরা এই রেস্তোরাঁটি সেন্ট্রাল পার্কের সবুজ প্রকৃতির কাছাকাছি অবস্থিত। এখানে রুস্ট বিফ স্যান্ডউইচ ও গরম সcone-এর সাথে চমৎকার দুপুরে খাবার উপভোগ করা যেতে পারে।
এরপরের গন্তব্য ক্রাইসলার বিল্ডিং। ম্যানহাটনের অন্যতম জনপ্রিয় আর্ট ডেকো আকাশচুম্বী এই অট্টালিকাটি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি ভবন। বর্তমানে এটি একটি অফিস ভবন, তবে দর্শনার্থীরা এর লবিতে প্রবেশ করে মূল নকশা দেখতে পারেন। জ্যামিতিক নকশার লিফট ও শিল্পী এডওয়ার্ড টার্নবুলের বিশাল আকারের দেয়ালচিত্র এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দিনের শেষে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এ সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে। ক্রাইসলার বিল্ডিং থেকে এক মাইলেরও কম দূরে অবস্থিত এই বিল্ডিংটিও আর্ট ডেকো স্থাপত্যের এক দারুণ উদাহরণ। কিং কং ও স্লিপলেস ইন সিয়াটলের মতো সিনেমাতে এর দৃশ্য আজও দর্শকদের মনে দাগ কাটে। এই বিল্ডিং-এর নিচে অবস্থিত স্টেট গ্রিল অ্যান্ড বার-এ বার্গার ও স্টেক-এর মতো খাবার পাওয়া যায়। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর ৮৬ তলার অবজারভেটরি ডেকে গিয়ে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে।
রাতের বেলা জ্যাজ উপভোগ করতে পারেন ক্যাম্পবেল বারে। গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনালের ভেতরে লুকানো এই বারটি একসময় ছিল জ্যাজ যুগের ফিনান্সার জন ডব্লিউ ক্যাম্পবেলের অফিস। পরে এটি পরিত্যক্ত হলেও, এখন একে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এখানে হাতে আঁকা ফ্লোরেন্টাইন-অনুপ্রাণিত সিলিং ও লাইভ জ্যাজ সঙ্গীতের সাথে ককটেল উপভোগ করা যেতে পারে।
রাতের শেষ আকর্ষণ হল ‘ব্যাক রুম’ স্পিকইজি। এই গোপন জায়গাটির প্রবেশপথ খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। প্রথমে ‘লোয়ার ইস্ট সাইড টয় কোম্পানি’-র সাইনবোর্ড অনুসরণ করতে হবে, তারপর একটি গলিপথ ধরে নিচে নামতে হবে। একসময়, এই স্পিকইজি’তে সমাজের অন্ধকার জগতের মানুষের আনাগোনা ছিল। তবে এখন এটি একটি জনপ্রিয় স্থান, যেখানে সুন্দর কাপে জিন ও এল্ডরফ্লাওয়ার ককটেল পরিবেশন করা হয়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক