যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন যখন তীব্র হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন তিনি।
ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধে সৌদি আরব মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে, এবং এই বৈঠকের মাধ্যমে সংকট সমাধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিধা দেখা দিয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা বন্ধ করার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন।
তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়া নতুন করে আক্রমণ জোরদার করেছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং রুশ বাহিনী দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
খবর অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবার ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে।
এই বৈঠকে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনা এবং দেশটির খনিজ সম্পদ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এর আগে, ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির একটি বৈঠক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক নীতি হলো একটি স্থায়ী “শান্তি” প্রতিষ্ঠা করা, তবে তিনি মূলত ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন।
জেলেনস্কি অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি খনিজ সম্পদ বিষয়ক একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত আছেন, যদিও কিয়েভ মনে করে, রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
জেলেনস্কি মঙ্গলবারকের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না, তবে তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রতিনিধি দলে থাকবেন।
জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা গঠনমূলক আলোচনার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করতে এবং তাতে সম্মত হতে চাই।
আমাদের কাছে বাস্তবসম্মত প্রস্তাবনা রয়েছে।
দ্রুত এবং কার্যকরভাবে কাজ করাই মূল বিষয়।”
জানা গেছে, ইউক্রেনীয় পক্ষ থেকে একটি শান্তি প্রস্তাব পেশ করা হতে পারে, যেখানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করা এবং কৃষ্ণ সাগরে সামরিক কার্যক্রম স্থগিত করার কথা বলা হবে।
জেলেনস্কি এই প্রস্তাবকে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকারের পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন।
তবে, এখন পর্যন্ত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আসন্ন বৈঠক থেকে ভালো ফল আশা করছেন এবং তিনি কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবছেন।
ইউক্রেনীয় সৈন্যরা বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।
সোমবার দেশটির সীমান্ত রক্ষীরা জানিয়েছে, রুশ বাহিনী উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলে একটি সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করার চেষ্টা করছে।
সীমান্তরক্ষী মুখপাত্র আন্দ্রি দেমচেঙ্কো জানান, “আমরা লক্ষ্য করেছি যে, নোভেনকে অঞ্চলের দিকে, শত্রু ইউক্রেনের ভূখণ্ডে সক্রিয় শত্রুতা তৈরির চেষ্টা করছে এবং সেখানে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চাইছে।
এছাড়াও, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুজা শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
রবিবার ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানায়, তারা গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে আসা রুশ সেনাদের একটি বড় ধরনের হামলা প্রতিহত করেছে।
প্রায় একশ জন রুশ সেনা ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের ভেতর দিয়ে সুজার উপকণ্ঠে প্রবেশ করে।
এদিকে, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ দাবি করেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রায় ঘেরাও হয়ে গেছে এবং খুব শীঘ্রই তাদের বিতাড়িত করা হবে।
ট্রাম্প সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন সত্ত্বেও ইউক্রেন হয়তো রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সম্ভবত তারা কোনোভাবেই টিকতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, জেলেনস্কি বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে “শিশুর কাছ থেকে পাওয়া ক্যান্ডির” মতো করে অর্থ নিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান