মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID)-এর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন USAID-এর ৮৩ শতাংশ কর্মসূচি বাতিল করতে যাচ্ছে এবং অবশিষ্ট কর্মসূচিগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে রুবিও জানান, USAID-এর অধীনে থাকা প্রায় ১০০০ টি কর্মসূচি এখন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালনা করবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা সংস্থার কার্যক্রম দ্রুত কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, যেটিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্ক সমালোচনা করেছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (X) দেওয়া এক পোস্টে রুবিও বলেন, “আমরা ৬ সপ্তাহের পর্যালোচনার পর USAID-এর ৮৩% প্রোগ্রাম আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করছি।” তিনি আরও জানান, বাতিল হওয়া ৫,২০০ টি চুক্তিতে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী ছিল অথবা কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়েছে। তবে তিনি বাতিল হওয়া চুক্তিগুলোর বিস্তারিত জানাননি।
রুবিও যোগ করেন, “আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অবশিষ্ট ১৮% প্রোগ্রাম (প্রায় ১০০০) এখন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে।”
এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে ইলন মাস্ক এক্সে (X) লেখেন, “কঠিন হলেও, প্রয়োজনীয়।” মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই USAID-এর সমালোচনা করে আসছিলেন এবং এর কার্যক্রমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন।
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, আদালতকে দেওয়া এক নথিতে প্রশাসন জানায়, তারা USAID-এর অধীনে থাকা প্রায় ৫,৮০০ টি চুক্তি বাতিল করেছে। রুবিও প্রত্যেকটি চুক্তির বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং সেগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ ও পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় বাতিল করার পক্ষে মত দেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাতিল হওয়া কর্মসূচির মধ্যে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং জরুরি ত্রাণ কার্যক্রমের অর্থও অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেশ কয়েকজন মানবিক সহায়তা কর্মী এই চুক্তি বাতিলের ঘটনাকে ‘রক্তাক্ত’ পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং USAID-এর কর্মকর্তাদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। জানা যায়, কিছু বাতিল হওয়া চুক্তি পরে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, USAID দারিদ্র্য বিমোচন, রোগ নিরাময়, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে। সংস্থাটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায়ও সহায়তা করে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে USAID-এর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, যার কারণ হিসেবে তারা তহবিল অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রুবিও জানান, তিনি USAID-এর ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে কাজ করছেন এবং কংগ্রেসকে তিনি অবহিত করেছেন যে তিনি ডেপুটি পিট মারোকোকে USAID-এর কার্যক্রম পর্যালোচনা ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে কার্যকারিতা বাড়ানো যায় এবং কার্যক্রমগুলো জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
আদালতে প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। একটি ফেডারেল আদালত কর্মীদের ছুটি দেওয়া এবং ছাঁটাই করার অনুমতি দিলেও, অন্য একটি আদালত মানবিক সহায়তা বাবদ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই রায় বহাল রাখলেও, অর্থ পরিশোধের সময়সীমা জানায়নি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন