যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড লর্ডস-এর সদস্য হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ব্যবসা ও পরামর্শক পদে কাজ করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। এই খবর এখন বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
লর্ড হওয়ার পর থেকে তিনি অন্তত ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, যার মধ্যে সৌদি আরব, বাহরাইন ও কুয়েতের মতো দেশও রয়েছে, যাদের মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন বিনিয়োগ সংস্থা, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং কর পরামর্শক সংস্থাতেও তিনি কাজ করেছেন।
২০২০ সালে লর্ড হওয়ার পরেই হ্যামন্ড তার নিজের পরামর্শক সংস্থা ‘ম্যাট্রিক্স পার্টনার্স’ (Matrix Partners) খোলেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই সংস্থাটি থেকে কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে প্রায় ৩ মিলিয়ন পাউন্ড। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি সরকারের কাছ থেকেই তিনি পেয়েছেন আট লক্ষ পাউন্ডের বেশি।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ‘লর্ডস’-এর নিয়ম অনুযায়ী, সদস্যরা ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনো পেশায় যুক্ত থাকতে পারেন। তবে, এই ধরনের কাজের মাধ্যমে তাদের পদ বা সম্মানের কোনো অপব্যবহার হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে অনেক সময় প্রশ্ন ওঠে। সমালোচকদের মতে, লর্ডরা একইসঙ্গে সরকারের আইন তৈরি ও বিভিন্ন বিষয়ে ভোট দেন। তাই তারা যদি পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন, তাহলে এটি তাদের পদের সুযোগ নেওয়া হিসেবে দেখা যেতে পারে।
হ্যামন্ডের এইসব কাজের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য দিক রয়েছে। তিনি যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন জাপানের একটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি একটি ক্রিপ্টো (crypto) স্টার্টআপ-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন, যেখানে তার সামান্য শেয়ারও রয়েছে। জানা যায়, একসময় এই শেয়ারের মূল্য ছিল প্রায় ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
লর্ড হ্যামন্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার এইসব কাজের সঙ্গে লর্ডস-এর সদস্যপদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, লর্ডসের নিয়মকানুন মেনেই তিনি সবকিছু করছেন এবং কোনো ধরনের অনিয়ম যাতে না হয়, সে বিষয়ে তিনি সবসময় সতর্ক থাকেন।
তবে, হ্যামন্ডের কিছু কাজের বিষয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। তিনি একটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে একজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। পরে সরকারি একটি সংস্থা (Advisory Committee on Business Appointments – ACOBA) এই বিষয়ে তার সমালোচনা করে এবং তার এই পদক্ষেপকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করে।
লর্ড হ্যামন্ডের বিভিন্ন আয় এবং তার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কোম্পানির হিসাব এখনো পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। তবে, বিদেশি সরকার থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ তিনি প্রকাশ করেছেন। সৌদি সরকার থেকে অর্থনৈতিক পরামর্শের জন্য তিনি প্রায় ৫ লক্ষ ৩ হাজার পাউন্ড পেয়েছেন। বাহরাইনের শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে পেয়েছেন ২ লক্ষ ৮৮ হাজার পাউন্ড এবং কুয়েত বিনিয়োগ অফিসের থেকে পেয়েছেন প্রায় ৩১ হাজার ২৫০ পাউন্ড।
যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনীতিবিদদের এই ধরনের আর্থিক সম্পর্ক অনেক সময় বিতর্কের জন্ম দেয়। কারণ, এর ফলে জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যে, রাজনীতিবিদরা তাদের পদের সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা নিচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান