যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অফ লর্ডসের কয়েকজন সদস্য গত দুই বছরে বিভিন্ন বিদেশি সরকার থেকে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে, বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছেন। এই অর্থের পরিমাণ ৩০ লক্ষ পাউন্ডের বেশি, যা বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে প্রায় ৪২ কোটি টাকার সমান। খবরটি প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই অর্থ গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্তত ২৭ জন লর্ড সদস্য রয়েছেন। তাঁরা পরামর্শক ও আইনি সেবার মতো বিভিন্ন কাজের জন্য এই অর্থ পেয়েছেন। উদ্বেগের বিষয় হলো, অর্থ প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জোরালো সমালোচনা রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, কাজাখস্তান ও আজারবাইজান।
যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিদেশি সরকারের অর্থ জমা হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত মুখ হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। তিনি সৌদি আরব, বাহরাইন ও কুয়েত থেকে গত দুই বছরে প্রায় ৮ লক্ষ ১৬ হাজার পাউন্ড (প্রায় ১১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা) গ্রহণ করেছেন। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মতে, কোনো লর্ড সদস্য এমন কোনো রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করতে পারেন না, যাদের মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নীতিগত বিরোধ রয়েছে।
যদিও হাউজ অফ লর্ডসের নিয়ম অনুযায়ী, সদস্যরা বিদেশি সরকার বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ নিতে পারেন, তবে তাঁদের এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, কোন উৎস থেকে কত টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তা জানাতে হয়। মূলত বিদেশি সরকারগুলোর পক্ষ থেকে ব্রিটিশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় এই নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কোনো জনপ্রতিনিধির মূল দায়িত্ব হলো দেশের স্বার্থ রক্ষা করা। বিদেশি রাষ্ট্র থেকে অর্থ গ্রহণ করলে স্বার্থের সংঘাতের সম্ভবনা থাকে। কারণ, এতে আনুগত্যের প্রশ্ন আসে। এই ধরনের ঝুঁকি এড়াতে তাঁদের বিদেশি সরকারগুলোর হয়ে কাজ করা উচিত নয়, বিশেষ করে যেসব দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কাজ করা উচিত না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফিলিপ হ্যামন্ড জানান, তাঁর বিভিন্ন ধরনের পেশাগত কাজের সঙ্গে লর্ডস সদস্য পদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, তিনি হাউজ অফ লর্ডসের নিয়মকানুন মেনেই সব কাজ করেন।
এই ঘটনা যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারণ, হাউজ অফ লর্ডস হলো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ, যা বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ধরনের ঘটনায় জনপ্রতিনিধিদের সততা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান