**কানাডার উত্তরে শীতের অভিযান: বরফ ভাঙা জাহাজে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা**
কানাডার উত্তরে, সেন্ট লরেন্স নদীর তীরে, বরফের চাদরে মোড়া একটি অসাধারণ শীতকালীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা! সম্প্রতি, “লে কমাঁদাঁ শার্কো” নামের এক অত্যাধুনিক বরফ ভাঙা জাহাজে করে উত্তর কুইবেকের দিগন্ত ছুঁয়ে আসার সুযোগ হয়েছিল। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর তুষারের মধ্যে এই অভিযান ছিল যেন এক অন্য জগৎ।
যাত্রাটি শুরু হয়েছিল কুইবেক সিটি থেকে। সেখানে শীতকালীন একটি প্রতিযোগিতাও চলছিল, যেখানে স্কটিং, স্নোশুয়িং, নর্ডিক স্কিইং এবং বাইকিংয়ের মতো খেলা ছিল। এরপর আমরা যাত্রা করি সেন্ট লরেন্স নদীর একটি শাখা, সাগুইনে নদীর দিকে। ধীরে ধীরে বরফের স্তর যখন পুরু হতে শুরু করলো, তখন আমরা প্রবেশ করি ‘হা! হা! বে’-তে, যেখানে চারপাশের সবকিছু জমে কঠিন বরফ হয়ে গিয়েছিল। এরপর জাহাজটিকে সরাসরি বরফের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়, যা ছিল কল্পনাতীত!
এই অভিযানের মূল আকর্ষণ ছিল প্রকৃতির সৌন্দর্য আর স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া। যাত্রাপথে আমরা আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশেছি, তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা দেখেছি, যা ছিল অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী। স্থানীয় গাইড আমাদের বন্যপ্রাণীর পায়ের চিহ্ন দেখিয়েছেন, কুইবেকের প্রায় ৫০০ বছরের ইতিহাস সম্পর্কে জানিয়েছেন এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন।
জাহাজটি ছিল যেকোনো আধুনিক সুবিধার থেকেও অনেক বেশি আরামদায়ক। এখানে ছিল অ্যালেইন ডুকাস-এর মতো বিখ্যাত শেফের রেস্টুরেন্ট, যা সমুদ্রের মধ্যে একটি বিরল অভিজ্ঞতা। এছাড়াও ছিল বিলাসবহুল কেবিন, যেখানে বসে বাইরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যেত। জাহাজে ছিল দুটি রেস্তোরাঁ, যেখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করা হতো। একটি ছিল ‘নুনা’ যা ছিল ফরমাল ডাইনিংয়ের জন্য, অন্যটি ‘সিলা’ যেখানে বুফে স্টাইলে খাবার পাওয়া যেত। এছাড়াও ছিল দুটি বার, যেখানে ককটেল ও অন্যান্য পানীয়ের ব্যবস্থা ছিল।
তবে, এই ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল এখানকার অভিজ্ঞতাগুলো। বরফের উপর হেঁটে বেড়ানো, স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে তাদের সংস্কৃতিকে অনুভব করা, এইসব কিছুই ছিল অসাধারণ। বরফের মধ্যে জাহাজ থামিয়ে যখন বাইরে যাওয়া হলো, তখন মনে হচ্ছিল যেন কোনো দুঃসাহসিক অভিযানে বেরিয়েছি। বরফের মধ্যে এখানকার স্থানীয়দের তৈরি করা বিশেষ স্নো-মোবাইলে চড়ে ঘুরাঘুরি করাটাও ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা।
সাগুইনে নদী থেকে আমরা আরও উত্তরে, সেপ্ট-ইলেস নামক একটি গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে ইনু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য—সবকিছু আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলা, তাদের গান শোনা, তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার—সবকিছুই ছিল অবিস্মরণীয়।
এই ভ্রমণটি ছিল প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া এবং নতুন কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এক দারুণ সুযোগ। যারা একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই শীতের অভিযান হতে পারে একটি অসাধারণ যাত্রা।
তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লিজার