দক্ষিণ সুদানের এক কিশোরীর বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আত্মগোপনে যাওয়া মা, মেয়ের আসন্ন সন্তান জন্মদানের জন্য অবশেষে আশ্রয় নিলেন কেনিয়ায়। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
আথিয়াক দাও রিয়াক নামের ওই কিশোরীর মা, ডেবোরাহ কুয়ের ইয়াচ গত বছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিলেন, যখন তিনি মেয়ের বিয়ের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। ডেবোরাহ-এর দাবি ছিল, তার মেয়ে আথিয়াকের বয়স তখন মাত্র ১৪ বছর। স্বামীর পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভয়ে তিনি জুবা শহরের বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
আট মাস ধরে একটি স্থানীয় এনজিও’র তত্ত্বাবধানে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পর ৪১ বছর বয়সী ডেবোরাহ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে যান। জানা গেছে, আথিয়াক সেখানে তার আত্মীয়দের সঙ্গে থাকছেন। আথিয়াকের স্বামী চল্লিশোর্ধ্ব চোল মারোল ডেং কানাডায় বসবাস করেন।
ডেবোরাহ বলেন, “আথিয়াক এখন সন্তানসম্ভবা। এই অবস্থায় আমি আর বিয়ের ব্যাপারে কিছু করতে পারব না। তারা স্বামী-স্ত্রী, তাদের ব্যাপার তারা মিটিয়ে নেবে। হয়তো পরে সে আবার স্কুলে যেতে পারবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের ডিঙ্কা সংস্কৃতি অনুযায়ী, মেয়ের প্রথম সন্তানের জন্ম মায়ের বাড়িতেই হওয়া উচিত। সে কারণেই আমি কেনিয়ায় যাচ্ছি।
ডিঙ্কা সম্প্রদায় দক্ষিণ সুদানের বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আথিয়াক সেখানে মায়ের সঙ্গে থাকতে পারবে কিনা, তা ডেবোরাহ জানেন না। তবে তিনি মেয়ের পাশে থাকতে চান। যাতে মা হওয়ার পথে তিনি আথিয়াককে পথ দেখাতে পারেন এবং সন্তানের দেখাশোনা করতে পারেন।
যদিও বাল্যবিবাহের এই ঘটনার জন্য অনেকে আথিয়াককে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখছেন, কিন্তু আথিয়াক পরিবারের অন্যদের সঙ্গেই ছিলেন, যারা এই বিয়ের আয়োজন করেছিলেন। ডেবোরাহ গণমাধ্যমকে জানান, “আথিয়াক আমার কাজের সঙ্গে একমত নয়। সে মনে করে, আমি পরিবারের সম্মানহানি করেছি। আমি তাকে বুঝিয়েছি যে, আমি যেখানে খারাপ ব্যবহার পাই, সেখানে থাকতে চাই না। আথিয়াক পরিবারের সম্মান রক্ষা করতে চায়, কিন্তু আমি আমার নিজের সত্য এবং অধিকারের পথে চলব।
তিনি আরও জানান, তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চান। কারণ তিনি জানতে পেরেছেন, তার স্বামী নাকি ইতোমধ্যে অন্য এক নারীকে ঘরে তুলেছেন।
২০২৪ সালের জুন মাসে আথিয়াক তার ঐতিহ্যবাহী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরেই নাইরোবিতে চলে যান। দক্ষিণ সুদানের আইনজীবী জোসেফিন আদেত ডেং-এর দায়ের করা একটি মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি, যেখানে ডেবোরাহর স্বামী দাও রিয়াক মাগান্যর বিরুদ্ধে নাবালিকা মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও দক্ষিণ সুদানের আইনে এটি একটি অপরাধ।
অক্টোবর মাসে কেনিয়া থেকে আথিয়াককে ফিরিয়ে আনার জন্য ডেং-এর করা আবেদনও খারিজ করে দেয় দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন অফিস।
ডেবোরাহ তার আরও তিন মেয়েকে একই ধরনের পরিণতি থেকে বাঁচাতে চান। তাই তিনি তাদের নিয়ে কেনিয়ায় গিয়েছেন। তার ভাই, যিনি আথিয়াকের বিয়ের বিরোধিতা করেছিলেন, তিনিও তাকে সমর্থন করছেন। ডেবোরাহ আশা করেন, কেনিয়ায় মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করে তিনি তাদের ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন।
তিনি আরও জানান, “আমি আমার দেশ ছেড়েছি আমার সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য। যদি আমি দক্ষিণ সুদানে থাকতাম, তবে হয়তো তাদেরও অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যেত।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান