মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় ৬০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এই ঘটনায় সেখানকার শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেকের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে এবং তাদেরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সতর্ক করেছে।
এই তদন্তের মূল কারণ হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নাগরিক অধিকার আইনের ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ (Title VI of the Civil Rights Act) অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এই আইনে জাতি, বর্ণ বা জাতীয়তার ভিত্তিতে কোনো প্রকার বৈষম্য করা হলে, সরকারি তহবিল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
জানা গেছে, এই অভিযোগগুলোর কারণ হিসেবে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে হওয়া বিভিন্ন প্রতিবাদকে দায়ী করা হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে হামাসের হামলার পর থেকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে ইসরায়েল বিরোধী স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার দাবিও জানাচ্ছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কলেজ ক্যাম্পাসে “ইসরায়েল বিরোধী” এবং “ইহুদি বিদ্বেষী” কার্যকলাপ দমনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এই বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন এবং একটি টাস্কফোর্সও গঠন করেন। ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগের কারণে তাদের প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করার ঘোষণা দেয়। এছাড়াও, তদন্তের আওতায় আসা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কলম্বিয়া, নর্থওয়েস্টার্ন, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে এবং মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখযোগ্য।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত অ্যাক্টিভিস্ট মাহমুদ খলিলকে আটক করা হয়। তার আইনজীবী জানিয়েছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দেশে তার গ্রিন কার্ড বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে। মাহমুদ খলিলের আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তার আইনজীবী একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং দ্রুত এর সমাধান করতে চায়। তারা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি এই ধরনের অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন