ইউক্রেন সীমান্ত অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা বাড়ছে, যা দেশটির পূর্বাঞ্চলে কিয়েভের সেনাদের দুর্বল করতে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করছে।
রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর চেষ্টা করছে এবং এর অংশ হিসেবে ইউক্রেনের সুমি প্রদেশে প্রবেশ করে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
ইউক্রেনীয় সীমান্তরক্ষী মুখপাত্র আন্দ্রি ডেমচেঙ্কো জানিয়েছেন, রাশিয়ান বাহিনী নোভেনকে গ্রামের আশেপাশে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে এবং সরবরাহ লাইনগুলো কেটে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, “ছোট ছোট কয়েকটি দল আমাদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে শক্তি জমা করে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে আরও গভীরে প্রবেশ করতে চাইছে, সম্ভবত সরবরাহ পথগুলো বন্ধ করার উদ্দেশ্যে।”
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এই আগ্রাসী মনোভাব সীমান্তকে কেন্দ্র করে তাদের সামরিক অভিযান সীমিত রাখতে চাইছে না, বরং সুমিতে ইউক্রেনীয় সেনাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।
কিয়েভ গত আগস্টে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের প্রায় ১,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধার করার পর থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনীয় সেনাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের সাফল্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পর রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা আরও বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন যে, রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক বোমা হামলা চালাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের অভাবে কিয়েভের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
তারা ছোট আকারের ফাইবার-অপটিক ড্রোন ব্যবহার করছে, যেগুলোর উচ্চ গতির তারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং যা ইলেক্ট্রনিক জ্যামিং প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
এদিকে, ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ওলেক্সান্ডার সিরস্কি জানিয়েছেন, সীমান্তে সেনাদের জন্য নতুন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং তাদের পশ্চাৎপসরণের কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সীমান্ত অঞ্চল এখনো ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় ইউক্রেন দুর্বল অবস্থায় থাকায় রাশিয়ার জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা কৌশলগতভাবে লাভজনক হবে।
এই মুহূর্তে উভয় পক্ষই ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তীব্র লড়াই করছে।
কারণ যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে বসাতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, উভয় পক্ষ যেন বর্তমান ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় এবং রাশিয়া কর্তৃক অধিকৃত অঞ্চলগুলোর বাস্তবতা ইউক্রেন মেনে নেয়।
২০২৩ সালে ইউক্রেনের আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ার পরে, তারা কুরস্কে অভিযান শুরু করে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে চেয়েছিল।
এছাড়া, রাশিয়ান সেনাদের বন্দী করা এবং শান্তি আলোচনায় দর কষাকষির সুযোগ তৈরি করতেও এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
তবে, কিছু বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে চাইছে।
এছাড়াও, রাশিয়ার পক্ষে কুরস্কে প্রায় ১২,০০০ উত্তর কোরীয় সেনা যুদ্ধ করছে।
শরৎ ও শীতকালে লড়াইয়ে তাদের প্রায় ৪,০০০ সৈন্য হতাহত হয়েছে বলে ইউক্রেনের ধারণা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান