মাহমুদ খলিল: ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মী, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে আটকের ঘটনা
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মী মাহমুদ খলিলকে আটকের ঘটনা বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জের ধরে তাকে আটক করা হয়। জানা গেছে, খলিল এর আগে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। তার আইনজীবীর দাবি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তার গ্রিন কার্ড বাতিল করার পরই ফেডারেল এজেন্টরা তাকে গ্রেপ্তার করে।
মাহমুদ খলিল একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসেবে সিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার একসময় ইসরায়েলের একটি মিশ্র-বসতিপূর্ণ শহরে বসবাস করত। তিনি ফিলিস্তিনি এবং ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। গত বছর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আলোচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির কথা বলেছেন এবং বিশ্বাস করেন যে ফিলিস্তিনি ও ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ের মুক্তি একে অপরের সঙ্গে জড়িত।
খলিলের আটকের পর তার আইনজীবী এমি গ্রিয়ার জানান, তার মক্কেল সুস্থ আছেন এবং তার মনোবল অটুট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনি এবং প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করে ভিন্নমতকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাহমুদ খলিলের ফিলিস্তিনি-পন্থী কার্যক্রমকে ‘সন্ত্রাসবাদের প্রতি সহানুভূতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ট্রাম্পের মতে, “খলিল একজন বিদেশি জঙ্গি ছাত্র এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ধরনের অভিযান ভবিষ্যতে আরও হতে পারে।”
খলিলের আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (American Civil Liberties Union – ACLU) পরিচালক বেন উইজনার বলেছেন, “খলিলের গ্রেপ্তার নজিরবিহীন, বেআইনি এবং আমেরিকান মূল্যবোধের পরিপন্থী।” তার মুক্তির দাবিতে এরই মধ্যে অনলাইনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা “মাহমুদ খলিলের মুক্তি চাই” স্লোগান দেয়।
তবে, অনেকে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টিসেমিটিজম (ইহুদি বিদ্বেষ) দমনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অ্যান্টি-ডিফেমেশন লীগ (Anti-Defamation League – ADL) এক বিবৃতিতে জানায়, “এই ধরনের পদক্ষেপ অ্যান্টিসেমিটিজম নির্মূলে সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রমাণ।”
খলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই বিক্ষোভগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানানো হয়। তবে, খলিল নিজে অ্যান্টিসেমিটিজমের নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন, “আমাদের আন্দোলনে সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতা নিশ্চিত করতে হবে।”
আদালতে শুনানির পর খলিলের বিরুদ্ধে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামী বুধবার নিউ ইয়র্ক সিটিতে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন