ওয়েলসের অভিনেতা মাইকেল শিন, যিনি তার নিজের অর্থে যুক্তরাজ্যের দরিদ্র ঋণগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা।
সম্প্রতি, তিনি প্রায় ১ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ঋণ কিনে তা মওকুফ করে দিয়েছেন, যা উচ্চ সুদের হারে জর্জরিত মানুষের জীবনে এনেছে কিছুটা স্বস্তি।
এই ঘটনা বাংলাদেশের ঋণ সংকট এবং ক্ষুদ্র ঋণের চ্যালেঞ্জগুলো নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
মাইকেল শিনের এই পদক্ষেপ মূলত একটি তথ্যচিত্রের অংশ।
যেখানে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিপুল পরিমাণ ঋণ কিনে নেওয়া যায়।
তথ্যচিত্রটিতে দেখা যায়, তিনি প্রায় ১ লক্ষ পাউন্ড খরচ করে ১ মিলিয়ন পাউন্ডের ঋণ কিনে তা বাতিল করে দেন।
এর মূল উদ্দেশ্য ছিল উচ্চ সুদের ঋণের ফাঁদে পড়া মানুষের কষ্টগুলো তুলে ধরা এবং এই ধরনের ঋণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করা।
শিনের ভাষায়, এটি ছিল অনেকটা ‘রবিন হুড’-এর মতো, যেখানে ধনীরা দরিদ্রদের শোষণ করে এবং তিনি সেই শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে, বিশেষ করে শিনের নিজের শহর পোর্ট ট্যালবটে, অনেক পরিবার উচ্চ সুদের ঋণের কারণে চরম দুর্দশার শিকার।
তথ্যে দেখা যায়, অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত, যুক্তরাজ্যের প্রায় ২২ লক্ষ কম আয়ের পরিবার উচ্চ সুদের ঋণের জালে আবদ্ধ ছিল।
এই ঋণগুলো তাদের জীবনযাত্রার মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
শিন সেখানকার মানুষের সাথে কথা বলেছেন, যারা সামান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
বাংলাদেশেও, দরিদ্র মানুষের উপর ঋণের বোঝা একটি গুরুতর সমস্যা।
বিশেষ করে, ক্ষুদ্র ঋণ এবং সুদের হার নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে, উচ্চ সুদের কারণে মানুষ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ে।
এমনও দেখা যায়, সামান্য ঋণের বোঝা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এই প্রেক্ষাপটে, মাইকেল শিনের উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে।
শিনের এই কার্যক্রম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঋণ সমস্যা শুধু একটি আর্থিক বিষয় নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সমস্যাও বটে।
এটি দারিদ্র্য, অসমতা এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়ায়।
আমাদের দেশেও, ঋণ ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনা এবং দরিদ্র মানুষের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা জরুরি।
একই সাথে, ঋণ গ্রহীতাদের সচেতন করা এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন।
মাইকেল শিনের এই দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে, সমাজের ভালোর জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের সকলেরই উচিত, সমাজের দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করা।
ক্ষুদ্র হলেও, প্রতিটি পদক্ষেপ একটি পরিবর্তন আনতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান