মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার থেকে আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে জানা গেছে, কানাডার অন্টারিও প্রদেশের পক্ষ থেকে কিছু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যে বিদ্যুতের রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ সারচার্জ বসানো হয়েছে।
ট্রাম্প এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে লেখেন, “কানাডার উচিত হবে আমাদের ‘ফিফটি ফার্স্ট স্টেট’ (যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়া)। তাহলে শুল্ক এবং অন্যান্য বিষয়গুলো এমনিতেই দূর হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। কারণ, কানাডার পক্ষ থেকেও এর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র কানাডা থেকে ৪১২.৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। একই সময়ে কানাডায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪১.৪ বিলিয়ন ডলার।
কানাডা যুক্তরাষ্ট্রকে ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। গত বছর দেশটি থেকে প্রায় ১৯.৫ বিলিয়ন ডলারের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
কানাডার অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড জানিয়েছেন, তাঁর সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান, মিনেসোটা এবং নিউইয়র্ক রাজ্যে বিদ্যুতের রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করবে। তাঁর মতে, এই সারচার্জের কারণে ওই তিনটি রাজ্যের পরিবার ও ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন প্রায় ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি টাকার বেশি) খরচ হতে পারে। ফোর্ড আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তিনি বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করতেও দ্বিধা করবেন না।
মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি ল্যারি সামার্স এই শুল্ক আরোপকে ট্রাম্পের “সবচেয়ে খারাপ বাণিজ্য নীতি” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন শিল্পের প্রধান উপকরণগুলোর দাম বাড়ানো – যেখানে এক কোটি মানুষ কাজ করে – তা একজন মার্কিন প্রতিপক্ষের কাজ।
এদিকে, কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাস্টিন ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি দায়িত্ব নিতে পারেন। কার্নি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও গভীর করতে চান এবং অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা এই লড়াই চাইনি, তবে কানাডিয়ানরা সবসময় প্রস্তুত থাকে।
এই বাণিজ্য বিরোধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে কতটা পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের দাম বাড়লে, বাংলাদেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা