পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে সশস্ত্র জঙ্গিদের হামলায় একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের জিম্মি সংকট অবশেষে মুক্তি পেয়েছে।
সামরিক বাহিনীর অভিযানে ১৫০ জনের বেশি জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফার এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ট্রেনটি একটি সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করার সময় জঙ্গিরা হামলা চালায় এবং এরপর যাত্রীদের জিম্মি করে।
এরপর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা নারী ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
উদ্ধার হওয়া এক নারী ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “কেয়ামতের দিনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।”
তিনি জানান, হামলার সময় তিনি গুলির শব্দ শুনে পালিয়ে যান এবং দুই ঘণ্টা হেঁটে নিরাপদ স্থানে পৌঁছান।
বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এই গোষ্ঠীটি বেলুচিস্তানে বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “রমজান মাসে নিরীহ যাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসীদের হামলা ইসলাম, পাকিস্তান এবং বেলুচিস্তানের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।”
তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলার ফলে বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
চীনের বিনিয়োগকারীরাও এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হতে পারে, কারণ এই প্রদেশে তাদের অনেক বড় বিনিয়োগ রয়েছে।
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ।
এটি খনিজ সম্পদে ভরপুর এবং কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এখানকার স্থানীয় বেলুচ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বঞ্চনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এখানকার মানুষজন দারিদ্র্য ও বৈষম্যের শিকার।
তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করে।
এই কারণে এখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বাড়ছে।
বিশেষ করে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে গভীর সমুদ্রবন্দর গোয়াদর নির্মাণের পর থেকে এই অঞ্চলে অস্থিরতা বেড়েছে।
অতীতেও বিএলএ বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে।
গত নভেম্বরে কোয়েটা রেলস্টেশনে তাদের আত্মঘাতী হামলায় বহু লোক নিহত হয়।
এছাড়া, চীনা প্রকৌশলীদের ওপর হামলায়ও তারা জড়িত ছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেলুচিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে হলে সরকারের একটি নতুন কৌশল গ্রহণ করা উচিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন